বাকৃবির উচ্চফলনশীল বাউ সরিষা-৯ উদ্ভাবন
বাকৃবি প্রতিনিধি: স্বল্পমেয়াদী, উচ্চফলনশীল, রোগবালাই প্রতিরোধী এবং লবণাক্ততা সহিষ্ণু নতুন সরিষার জাত উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক। নতুন উদ্ভাবিত জাতটির নামকরণ করা হয়েছে বাউ সরিষা-৯। যা এ বছরের ৩১ মার্চ জাতীয় বীজ বোর্ড থেকে নিবন্ধন পেয়েছে।নতুন এ জাতটির উৎপাদনকাল ৭৮ থেকে ৮২ দিন এবং বীজে তেলের পরিমাণ ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ, যা দেশে প্রচলিত সরিষার সাধারণ জাতে প্রায় ৩০-৩৫ শতাংশ। উদ্ভাবিত জাতটি থেকে আড়াই কেজি সরিষা থেকে ১ লিটার তেল পাওয়া যাবে। জাতটির হেক্টর প্রতি ফলন প্রায় ২ টন, যা প্রচলিত অন্যান্য স্বল্পমেয়াদী সরিষার জাত থেকে প্রায় ২০-২৫ শতাংশ বেশি।উদ্ভাবিত বাউ সরিষা-৯ ছাড়করণ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সকল তথ্য জানান জাতটির উদ্ভাবক ও প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. এ. বি. এম. আরিফ হাসান খান রবিন। এছাড়া গবেষণা সহযোগী হিসেবে ছিলেন ওই বিভাগের একাধিক স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি শিক্ষার্থী।২৪ এপ্রিল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় কৌলিতত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের গবেষকের অফিস কক্ষে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।সংবাদ সম্মেলনে গবেষক জানান, বাউ সরিষা-৯ চাষের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, অল্টারনারিয়া ব্লাইট, পোকামাকড় এবং রোগবালাইয়ের আক্রমণ খুবই কম। জাতটি পরিমিতরূপে বন্যা ও লবণাক্ততা সহিষ্ণু হওয়ায় উৎপাদন প্রচলিত অন্যান্য জাতের তুলনায় প্রায় ২০-২৫ শতাংশ বেশি। কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর, কৌলিতত্ত¡ ও উদ্ভিদ প্রজননের গবেষণা মাঠ এবং বাকৃবির পাশ্ববর্তী ব্রহ্মপুত্র নদের চর এলাকায় জাতটির পরীক্ষামূলক চাষ করে আশানুরূপ ফলন পাওয়া গেছে। উদ্ভাবিত বাউ সরিষা-৯ এ অলিক এসিডের পরিমাণ শতকরা ১৬-১৭ শতাংশ, ওমেগা-৬ ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের অণুপাত ২৫:১, যা সয়াবিন তেলে ১৮:১। বাউ সরিষা-৯ থেকে প্রাপ্ত তেলের স্মোক পয়েন্ট ২৫০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড, যা সয়াবিন তেলের তুলনায় প্রায় ১৪ ডিগ্রী বেশি। সরিষার তেলে বিদ্যমান গ্লুকোসিনোনেট বিশ্লেষিত হয়ে আইসো থায়োসায়ানাইট তৈরি হয় যা কান্সার প্রতিরোধী। ফলে, ভোজ্য তেল হিসেবে বাউ সরিষা-৯ সরিষার তেল সয়াবিন তেলের তুলনায় অধিক স্বাস্থ্য সম্মত।উদ্ভাবিত জাত সম্পর্কে গবেষক বলেন, বাউ সরিষা-৯ ব্রাসিকা ন্যাপুস প্রজাতির যাদের জীবনকাল গড়ে ৮০ দিন। কৌলিতত্ত¡ ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের সংরক্ষিত ২৫০ টিরও অধিক জেনোটাইপের মধ্য থেকে স্বল্প জীবনকালীন পাঁচটি জেনোটাইপ প্রজাতিভেদে বাছাই করা হয়। পরে জেনোটাইপগুলোর ডায়ালাল মেটিং পদ্ধতিতে উচ্চতর গবেষণা করে বাউ সরিষা-৯ স্বল্পজীবনকালীন প্রজাতিটির উদ্ভাবন করা হয়।