চেষ্টা করো যতক্ষণ না সফলতা আসে: আশফিরা সুলতানা
রাজবাড়ীর মেয়ে আশফিরা সুলতানা, একজন সফল নারী উদ্যোক্তা, প্রশিক্ষক ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশন থেকে ব্ল্যাকবেল্ট অর্জনের পাশাপাশি তিনি আন্তর্জাতিক গোল্ড মেডেলিস্ট। তিনি মার্শাল আর্ট বিডির কো-ফাউন্ডার ও জয়েন্ট সেক্রেটারি এবং জনপ্রিয় অনলাইন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান জিনকি ডটকমের একজন অন্যতম উদ্যোক্তা। সম্প্রতি তিনি এমফিল ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তাঁর সফল হয়ে ওঠার নানা গল্প নিয়ে এশিয়ান টিভি অনলাইনের সাথে কথা হয় এই নারী উদ্যোক্তার। আলাপচারিতায় ছিলেন নুরুল ইসলাম।প্রশ্ন: কখন ও কীভাবে উদ্যোক্তা হওয়ার পথ চলা শুরু হলো?আশফিরা সুলতানা: ছাত্রাবস্থায় কয়েকজন মিলে ঐতিহ্য নামে অনলাইনে একটি ব্যবসা দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছিলাম। তাছাড়া ঢাকা বাজারের সাথে কাজ করেছি বেশ কিছুদিন। ব্র্যান্ড বাজারের ব্যাক এন্ডে কাজ করেছি কয়েক বছর। Balck IZ Ltd.-এ জব করেছি কয়েক বছর। তবে স্বাধীনভাবে কোনো কিছু করার ইচ্ছা ছিল ছোটবেলা থেকেই। এখন কারাতে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। আমাদের প্রতিষ্ঠান মার্শাল আর্ট বিডি বর্তমানে বাংলাদেশ কারাতে জগতে শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম। ধানমন্ডি, লালমাটিয়া এবং শনির আখড়ায় মার্শাল আর্ট বিডির শাখা রয়েছে। এখানে সকল বয়সী নারী ও পুরুষ কারাতে শিখছেন। পাশাপাশি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান জিনকি ডটকমের সাথেও সম্পৃক্ত আছি।প্রশ্ন: অনুপ্রেরণা কোথায় কীভাবে পেয়েছিলেন?আশফিরা সুলতানা: স্বাধীনচেতা একজন মানুষ হিসেবে সব সময় চেয়েছি নিজে কিছু করার, যার মাধ্যমে আরও দশজন উপকৃত হয়। আমার ছোটবেলায় যখন বিটিভিতে মার্শাল আর্টের অনুষ্ঠানগুলো সম্প্রচারিত হতো তখন থেকেই মার্শাল আর্টের প্রতি ভালোবাসা কাজ করে। মফস্বলে থাকার দরুন সেই সময় শেখার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। পরবর্তীতে আমার শ্রদ্ধেয় সেন্সেই নাজমুল শাহাদাতের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছি এবং তার থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছি।প্রশ্ন: এ পথ চলার গল্পটা বলুন।আশফিরা সুলতানা: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীদের জন্য কোনো কিছুই আসলে সহজ নয়। প্রফেশন হিসেবে কারাতে আরও অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। তবে যেহেতু কারাতে আমার প্যাশন, এটাকে প্রফেশন হিসেবে নিয়েছি এবং উপভোগ করছি। তরুণদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন আশফিরা সুলতানাপ্রশ্ন: কী কী প্রতিবন্ধকতা ছিলো সেখানে?আশফিরা সুলতানা: পরিবারের অধিকাংশ সদস্য চাকরিজীবী হওয়ায় সবার আশা ছিল, আমিও তাদের মতো চাকরিটাকে পেশা হিসেবে নিই। কিন্তু পরিবারের ও চারপাশের বিভিন্ন জনের মতামতের বাইরে গিয়ে আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করছি। তাছাড়া অনেকেই নানা কটু কথা বলা, বাধা দেয়া, বিভিন্নভাবে ডিমোটিভেট করেছে। এছাড়াও জনবল ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাও প্রতিকূলে ছিল।প্রশ্ন: স্বপ্ন বা ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে বলুন।আশফিরা সুলতানা: বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে সবারই উচিত সেলফ ডিফেন্সের জন্য কারাতে শেখা, বিশেষ করে মেয়েদের। ইচ্ছা আছে অদূর ভবিষ্যতে প্রতিটা জেলায় সকল মানুষের কাছে কারাতেকে পৌঁছে দেয়ার। এজন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।প্রশ্ন: নতুনদের উঠে আসার ব্যাপারে কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেয়ার আছে বলে মনে করেন?আশফিরা সুলতানা: নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে সরকার বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে, বিশেষ করে নারীদের জন্য। তাছাড়া ব্যাংকগুলো স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে থাকে। তরুণ উদ্যোক্তারা যাতে এ সুবিধাগুলো সহজে গ্রহণ করতে পারে, সেই পথটা আর সহজ করা দরকার।প্রশ্ন: তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য আপনার পরামর্শ।আশফিরা সুলতানা: তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য বলব, think a bigger picture. বড় স্বপ্ন দেখো, ডেডিকেশন দাও, অল্পতেই হাল ছাড়া যাবে না। সামনে একটি দরজা বন্ধ হয়ে গেলে বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কান্না না করে অন্য দরজা বা জানালা খুঁজে নাও। চেষ্টা করো যতক্ষণ না সফলতা আসে।