উপকূলের সংকট নিরসনে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন
খুলনা ব্যুরো: জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে উপকূলীয় মানুষের উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার সংযুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন খুলনা নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে দেশের উপকূলের জনজীবনে সংকট প্রতিনিয়ত বাড়ছে। প্রতি বছরের প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই সংকট আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এমতাবস্থায় উপকূলের মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষায় বিশেষ প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন।৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবার খুলনা সি এস এস আভা সেন্টারে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘লিডার্স’, ‘কোষ্টাল ভয়েজ অফ বাংলাদেশ’ এবং নাগরিক সংগঠন ‘সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন’ আয়োজিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে ‘উপকূলের মানুষের ইশতেহার’ শীর্ষক মত বিনিময় সভা থেকে এই দাবি জানানো হয়।সভায় উপস্থিত ছিলেন খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিত অধিকারী, খুলনা জেলা জাতীয়তাবাদী দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক কে. এম. আশরাফুল আলম নান্নু , জাতীয় পার্টি খুলনা শাখার সহ-সভাপতি তৈমুর হোসেন শাহীন, ওয়ার্কার্স পার্টি খুলনা শাখার সাধারণ পরিষদের সম্পাদক দেলোয়ার উদ্দিন, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ খুলনা জেলা শাখার আহ্বায়ক জনার্দন দত্ত, সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক এস এ রশীদ। খুলনা কালের কণ্ঠের ব্যুরো প্রধান গৌরাঙ্গ নন্দীর সভাপতিত্বে ও সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্রের সঞ্চালনায় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা লিডার্সের নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মন্ডল, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ খায়রুজ্জামান কামাল, খুলনা উন্নয়ন কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান, পিপি নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল খুলনার অ্যাড. জহিরুল ইসলাম পলাশ, সম্মিলিত নারী অধিকার সুরক্ষা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুতপা বেদজ্ঞ, বেলা’র বিভাগীয় সমন্বয়ক মাহফুজুর রহমান মুকুল প্রমুখ।গৌরাঙ্গ নন্দী তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, আমাদের রাজনৈতিক নেতারা সব সমস্যা নিয়ে কথা বললেও উপকূলের মানুষের কথা নিয়ে খুব বেশি কথা বলতে চান না। কিন্তু উপকূলের মানুষের অনেক সমস্যা রয়েছে। এজন্য রাজনৈতিক নেতারা যেন উপকূলীয় মানুষদের জন্য কাজ করে তিনি তার বক্তব্যে এ আহ্বান জানান।লিডার্সের নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মন্ডল উপকূলীয় মানুষের দুঃখ-দুর্দশার একটি চিত্র মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে সবার সামনে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে তা নিরসনের জন্য সরকারকে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের জন্য মহাপরিকল্পনা করা দরকার।সভায় উপকূলীয় মানুষের উন্নয়নে নিখিল চন্দ্র ভদ্র আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি সংযুক্ত করার আহ্বান জানান। দাবিগুলো হল: ১. উপকূলীয় উন্নয়ন বোর্ড গঠন, ২. নিরাপদ পানীয় জলের স্থায়ী ব্যবস্থা, ৩. একটি বাড়ি একটি শেল্টার তৈরি প্রকল্প গ্রহণ, ৪. দুর্যোগ প্রবণ এলাকা ঘোষণা করা, ৫. উপকূলের রক্ষাকবচ সুন্দরবন সুরক্ষা এবং ৬. টেকসই বেড়িবাঁধ পুনঃনির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ।সভায় ভুক্তভুগী পাইকগাছা অঞ্চলের ছাত্র সোমিত্র বলেন, উপকূলীয় মানুষের জীবন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আজ হুমকির মুখে।সভায় বক্তারা আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় অভিযোজন প্রক্রিয়া বাড়াতে হবে। আগামীতে সরকারের প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকা উপকূলের মানুষের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে। এজন্য আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার সংযুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন উপস্থিত সকল নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।