• ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ রাত ১২:৪১:৩৫ (22-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ রাত ১২:৪১:৩৫ (22-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:

বংশ পরম্পরায় পারিবারিক ও সামাজিক ঐতিহ্য ধরে রেখেছে মধুপুরের গারোরা

হাবিবুর রহমান, মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি: সাংসারেক রীতিনীতি ও ঐতিহ্যের গারো সম্প্রদায়ের লোকেরা নিজেদের মান্দি হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে থাকে। মান্দি মানে মানুষ। বিশেষ করে লাল মাটির মধুপুর অঞ্চলে গারোদের মধ্যে মান্দি শব্দের প্রচলন লক্ষণীয়। সাংসারেক ধর্ম থেকে খ্রিষ্ট ধর্মে দীক্ষিত হলেও আপ্যায়ন, খাদ্য, বৈচিত্র্যময় পোশাক, পড়াশোনা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ভিন্নতা, পরিচ্ছন্ন বসবাস, সাজানো-গোছানো বাসস্থানসহ নানা পার্বণে রয়েছে তাদের আদি ঐতিহ্যের ছোঁয়া।তাদের বিভিন্ন পর্বে দিক্কা, চুমান্থি আর বিন্নি ধানের চাল এখনও অনন্য। মান্দি ভাষায় চু তৈরির মাটির পাত্র হলো দিক্কা। চু বা বিচ্চি তৈরির ব্যবহৃত বীজ বা খামিকে চুমান্থি আর তৈরির মূল প্রক্রিয়ায় যে চালটি আদি থেকে ব্যবহার করে আসছে তা হলো বিন্নি ধানের চাল। বিয়ে-শাদি, জামাই-বউ নিয়ে আসার ক্ষেত্রেও বিন্নি চাল সমধিক প্রচলিত। বংশ পরম্পরায় টিকে থাকবে মান্দি গারোদের আদি-ঐতিহ্যের এ আপ্যায়ন রীতি, এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।জানা যায়, নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী গারো সম্প্রদায়ের লোকদের মঙ্গলীয় জাতিগোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে রয়েছে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। বাংলাদেশ ও ভারতের আসামে বসবাসরত গারো জনগোষ্ঠীর বিচিত্র খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় চু গুরুত্বপূর্ণ। চু’র উৎপত্তি নিয়ে ভারতের গারো পাহাড়ে বসবাসরত গারোদের মধ্যে লোকগল্প রয়েছে। এক সময় তারা চু পান করা জানত না। চু তৈরির উপকরণ খামি এবং গাজন প্রক্রিয়া আবিষ্কার তখনও হয়নি। ধীরে ধীরে এর প্রচলন শুরু হয়েছে।স্থানীয় মান্দিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা ব্রহ্মপুত্র নদের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল অর্থাৎ এপারকে আবিমা আর ওপারকে আফাল বলে অভিহিত করে থাকে। তাদের মতে, আবিমা হলো মা মাটি। অর্থাৎ মাটির মা। মধুপুর অঞ্চলের মাটির উর্বরতা শক্তির কারণে আবিমা বা মাটির মা বলে তাদের পূর্ব পুরুষেরা অভিহিত করে গেছে। আবিমা গারোদের বিভিন্ন উৎসবের মধ্যে ওয়ানগালা, রংচুগালা, মিমাংখাম বা শ্রাদ্ধ, নকনাবা বা নতুন ঘরে প্রবেশ, রান্দি মিকচি গালা বা মৃতস্বামীর স্মরণ অনুষ্ঠান, বিয়েসহ অন্যান্য অনেক অনুষ্ঠানে খাবার দাবার শেষে আতিথেয়তায় নিজস্ব প্রক্রিয়ায় বিন্নি ধানের চালের ভাত, পিঠা পরিবেশন করে থাকে। শেষে মেহমানদের সম্মানার্থে নিজস্ব প্রক্রিয়ায় একই চালের তৈরি চু পরিবেশন করা হয়।জিনিয়া গ্লোরিয়া ম্রং বলেন, এক সময় গারো পরিবারের শিশুদের চু’র সাথে পরিচিত করতে ভাত খাওয়ানোর সময় হাতের আঙুলে যৎ সামান্য মুখে দেয়া হতো। এখন সাংসারেক ধর্ম থেকে খ্রিষ্ট ধর্মে দীক্ষিত হবার পর আর হয় না বললেই চলে। তবে কোনো কোনো এলাকায় এখনো থাকতে পারে। তার মতে, এটা আপ্যায়ন করা তাদের মধ্যে অনেক সম্মানের।  শিল্পী ম্রংয়ের মতে, বিন্নি ধানের চাল আঠালো। পান-চিনি, জামাই দেখা অনুষ্ঠানসহ বিয়ে-শাদিতে বিন্নি ধানের চালের ভাত, পিঠা পরিবেশন করা হয়। আঠালো থাকার কারণে আত্মীয়তার বন্ধনটাও হবে আঠালো। যুগ-যুগ ধরে এমনটা মনে করে আসছেন তাদের সম্পদ্রায়ের লোকেরা।ইদিলপুর গ্রামের পান্না চাম্বুগং বলেন, তাদের বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ও আতিথিয়েতায় সম্মানিত করতে চু, বিচ্চি আর বিন্নি চালের ভাত পরিবেশন হচ্ছে আদি ঐতিহ্য।মধুপুর গড়াঞ্চলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নেতা ইউজিন নকরেক বলেন, তাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত চু, বিচ্চি, বিন্নি চালের গুরুত্ব রয়েছে। তাদের বিভিন্ন পূজা-পার্বণে দেবতার নামেও চু উৎসর্গ করা হয়। আতিথিয়েতায়ও চু অন্যতম। শিশু ভূমিষ্ট হওয়ার রাতে চুজাঙ্গি করা হয়। এক দেড়মাস আগে থেকেই এ চু তৈরি করা হয়। ভূমিষ্টের রাতে যেসব দাইরা থাকে তারা খেয়ে থাকে।তারমতে, ঐ নবজাতকের মুখেও একফোঁটা দেয়া হয়। এ চু মানতের মতো। তিনি আরও জানান, চুমান্থি ও বিন্নি ধান তাদের আদি ঐতিহ্য।