খোকসায় ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ছে বিষাক্ত উদ্ভিদ পার্থেনিয়াম
খোকসা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলাজুড়ে ব্যাপক হারে জন্মাচ্ছে পার্থেনিয়াম নামক এক বিষাক্ত আগাছা। যা মানবদেহ, এমনকি পশুপাখির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, ক্ষতিকারক এই উদ্ভিদ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন ও নিধনে নেয়া হচ্ছে ব্যবস্থা।খোকসা উপজেলার বিভিন্ন রাস্তার ধারে, বাড়ির আঙিনায় কিংবা ফসলের মাঠে ব্যাপক হারে জন্মাচ্ছে পার্থেনিয়াম নামক ক্ষতিকারক আগাছা। দেখতে অনেকটা গাজর গাছের মতো। যার উচ্চতা এক থেকে দেড় মিটার পর্যন্ত হয়। এক একটি গাছ ২০ থেকে ২৫ হাজার বীজের জন্ম দেয়। ফলে দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে। ঝাঁকরা গাছগুলোর সাদা ফুল খুবই বিষাক্ত। পার্থেনিয়াম গাছের আয়ুষ্কাল তিন থেকে চার মাস। এর সাদা রঙের ফুল গোলাকার ও আঠালো হয়ে থাকে।উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা খোকন হোসেন বলেন, পার্থেনিয়ামের ফুল মানুষ ও গবাদি পশুর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ গাছ নষ্ট করে ফসলের গুণগতমান ও উৎপাদনশীলতা।পরিবেশ বিজ্ঞানী গৌতম কুমার রায় জানান, পার্থেনিয়াম ফুলের রেণু বাতাসে ছড়ালে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে পৌঁছাতে পারে। যা থেকে জন্ম নিতে পারে শ্বাসকষ্ট, চর্ম, এলার্জি এমনকি মরণব্যাধি ক্যান্সারের মতো রোগ।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সবুজ কুমার সাহা জানান, পার্থেনিয়াম গাছের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে কৃষকদের সচেতনতা করতে পারলে বিষাক্ত এই আগাছা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। ক্ষতিকারক এই উদ্ভিদ নিধনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ারও আশ্বাস দেন তিনি।উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, গুল্ম প্রজাতির এই উদ্ভিদটির ইংরেজি নাম পার্থেনিয়াম। তবে এটি অঞ্চলভেদে কংগ্রেস ঘাস, গাজর ঘাস, চেতক চাঁদনী, হোয়াইট টপ ও স্টার উড প্রভৃতি নামেও পরিচিত। এই পুরো আগাছাটিই সম্পূর্ণ ক্ষতিকর। বিশেষ করে এর ফুলের রেণুতে থাকা সেস্কুটার্পিন ল্যাকটোন জাতীয় বিষাক্ত পদার্থ পার্থেনিন মানবদেহে জন্য খুবই ক্ষতিকর। এছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে বিষাক্ত রাসায়নিক ক্যাফেইক অ্যাসিড, পি-অ্যানিসিক অ্যাসিড প্রভৃতি। যা ক্ষতস্থানে রক্তের সঙ্গে মিশে চর্মরোগ হতে পারে। ফুলের রেণু বা বীজ নাকে প্রবেশ করলে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, জ্বর হয়। গরু এই আগাছা খেলে তার অন্ত্রে ঘা দেখা দেয়, দুধ উৎপাদন কমে যায়। এর পুষ্পরেণু বেগুন, টমেটো, মরিচের মতো সবজি উৎপাদন ব্যাহত করে। মাটিতে নাইট্রোজেন আবদ্ধকরণের প্রক্রিয়াও ব্যাহত করে।এই আগাছা দমন করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা একান্তই জরুরি। সমস্তকিছু করতে হবে হাতে রাবারের গ্লাভস বা পলিথিন প্যাকেট জড়িয়ে ও মুখে পাতলা মাস্ক পরে নিতে হবে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে এই বিষাক্ত উদ্ভিদের কাছে যাওয়া কোনোভাবেই নিরাপদ না।