• ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ রাত ১১:৩৯:৫১ (21-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ রাত ১১:৩৯:৫১ (21-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:

১২৫তম জন্মজয়ন্তীতে নিজের বিদ্যালয়ে ফিরছেন জীবনানন্দ দাশ

বরিশাল ব্যুরো: ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করা কবি জীবনানন্দ দাশের ১২৫তম জন্মজয়ন্তী বরিশালে ভিন্নভাবে উদ্‌যাপিত হতে যাচ্ছে।জীবনানন্দ জন্মজয়ন্তী উদ্‌যাপন পর্ষদের উদ্যোগে এবারের এ আয়োজনে কোনও ধরনের প্ল্যাস্টিক বা প্যানাফ্লেক্স সামগ্রী ব্যবহৃত হচ্ছে না। সেইসাথে জন্ম-জয়ন্তীর গোটা আয়োজন প্রথমবারের মতো কবি জীবনানন্দ দাশের প্রাতিষ্ঠানিক পাঠশালা ব্রজমোহন বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে।অনুষ্ঠানে সবাইকে থাকার আমন্ত্রণ জানিয়ে ১০ ফেব্রুয়ারি শনিবার দুপুরে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ জননী সাহান আর বেগম স্মৃতি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন করে জীবনানন্দ জন্মজয়ন্তী উদ্‌যাপন পর্ষদ।জীবনানন্দ জন্মজয়ন্তী উদ্‌যাপন পর্ষদের আহ্বায়ক কবি ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর দীপঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, জীবনানন্দ দাশের মৃত্যুর পর বুঝতে পারা গেছে তিনি কত বড় কবি ছিলেন। সাধারণ জীবনযাপন করেও তিনি অসাধারণ কবিতা লিখেছেন। বিগত দিনের ধারাবাহিকতায় কবি জীবনানন্দ দাশের ১২৫তম জন্ম-জয়ন্তীতে বরিশালের অনেকে অনেককিছুই করবে। তবে আমরা একটু ভিন্নতায় গুরুত্ব দিয়েছি।তিনি বলেন, কোনো কিছুর উদ্‌যাপনের পেছনে দুটি জিনিস কাজ করে, একটি হল মনে করিয়ে দেয়া আর একটি হল প্রচার। আর আমরা স্থানীয় প্রচারকে গুরুত্ব দিয়েই সাংবাদিক বন্ধুদের সাথে বসলাম। আশা করি, আপনাদের লেখনীর মধ্য দিয়ে জীবনানন্দ দাশের ১২৫তম জন্মজয়ন্তী সম্পর্কে আরও বেশি মানুষ জানবে। তাকে নিয়ে ভাববে।এসময় জীবনানন্দ জন্মজয়ন্তী উদ্‌যাপন পর্ষদের সদস্য জাহিদ আব্দুল্লাহ রাহাত বলেন, কবি জীবনানন্দ দাশের ১২৫তম জন্ম জয়ন্তীতে এই বোধের জায়গাটিতে ঝাঁকুনি দেয়ার একটা সময় হয়েছে। আমরা এমন একটি আয়োজন করতে চাই যা দীর্ঘমেয়াদে এই শহরে একটি কার্যকর অনুরণন সৃষ্টি করতে পারে।তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে কোনো আয়োজন ব্রজমোহন বিদ্যালয়ে হচ্ছে। জীবনানন্দ এই প্রতিষ্ঠানটির একজন কৃতি শিক্ষার্থী ছিলেন, যিনি ভালো ফলাফলের কারণে প্রতিবছর শিক্ষা বৃত্তি পেতেন। এই কৃতি শিক্ষার্থীর কল্যাণে বাংলা সাহিত্যে ব্রজমোহন বিদ্যালয় নামটি অক্ষয় হয়ে থাকবে, এই বিষয়টি বিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা হয়ত বুঝবে। প্রতিবছর এই মানের অন্তত একটি আয়োজন তারা করবেন। এছাড়া জীবনানন্দের জীবনের দু’জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব তাঁর বাবা সত্যানন্দ দাশ এবং প্রধান শিক্ষক আচার্য জগদীশ্চন্দ্র মুখোপাধ্যায় এর মতো শিক্ষকেরা একসময়ে এই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। এমন মহতী শিক্ষকদের শিক্ষা কী ছিলো, এ বিষয়ে বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হোক।অপরদিকে এই আয়োজনে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরাসরি মঞ্চে অভিনয় করবে, দেয়ালিকা তৈরি করবে এবং জীবনানন্দ বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে, যা তাদের চর্চায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।আর এবারের কবি জীবনানন্দ দাশের ১২৫তম জন্মজয়ন্তী আয়োজনটিতে কোনও ধরনের প্ল্যাস্টিক বা প্যানাফ্লেক্স সামগ্রী ব্যবহৃত হচ্ছে না। যা আজকালকার যেকোনো আয়োজনে প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু চাইলেই আসলে এসব এড়ানো যায়। এটা আমরা প্রমাণ করতে পারি। জীবনানন্দের আয়োজনে পরিবেশ ক্ষতির কারণ হয় এমন কিছু আমরা করতে পারি না।  ব্রজমোহন বিদ্যালয় নামাঙ্কিত ভবনটি জীবনানন্দ যখন পড়তেন তখনও এভাবেই ছিলো। আমরা মনে করি, এটি একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা এবং ভবনটি অবিকল রেখে আরও সুরক্ষিত করা উচিত। আমরা এই ভবনটিকেই আমাদের আয়োজনের ব্যাকড্রপ হিসেবে নান্দনিকভাবে উপস্থাপন করতে চাই।অনুষ্ঠানস্থলে জীবনানন্দ বিষয়ক বইয়ের একটি স্টল থাকবে। পাশাপাশি জীবনানন্দের লোগো সম্বলিত কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ, নোটপ্যাড, কলম এবং একটি প্রকাশনার প্রদর্শনী থাকবে। এছাড়া ব্রজমোহন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তৈরি জীবনানন্দ স্মরণে একটি ‘দেয়ালিকা’ থাকবে।আয়োজকরা জানান, জীবদ্দশায় জীবনানন্দ মাত্র ২৭২টি কবিতা প্রকাশ করেছিলেন। অথচ, তাঁর সাড়ে তিন হাজারের উপরে কবিতা রয়েছে, যা তাঁর মৃত্যুর পরে আবিষ্কৃত হয়েছে এবং এখনও অপ্রকাশিত কবিতা নামে প্রকাশিত হচ্ছে। তিনি ২৭টি উপন্যাস, ১০৯টি ছোটগল্প লিখেছেন। এছাড়া অসংখ্য প্রবন্ধ, সমালোচনা সাহিত্য, চিঠিপত্র, লিটেরারি নোটস ইত্যাদি পাওয়া যাচ্ছে। তাঁর আর্থিক সংকটের সময়ে তিনি যে কিছু গানও লিখেছিলেন সেটা একেবারেই অনাবিষ্কৃত ছিলো। আমরা জীবনানন্দের ১৫টি গান পেয়েছি (জীবনানন্দ দাশ: বিকাশ প্রতিষ্ঠার ইতিবৃত্ত-দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়, পৃষ্ঠা: ৫৮৫) যার মধ্যে বাছাই করে ৫টি গানের সুর ও সঙ্গীতায়োজন করা হয়েছে। যা এপার বাংলা-ওপার বাংলা মিলে সম্ভবত প্রথমবারের মতো পরিবেশিত হতে যাচ্ছে।যারা গানগুলোর সুর ও সঙ্গীতায়োজন করেছেন তারা হলেন, ব্রজমোহন বিদ্যালয়ের শিক্ষক মৈত্রী ঘরাই, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোহেল রানা, সরকারি বরিশাল কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সঞ্জয় হালদার, নজরুল ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী রিপন কুমার গুহ।এছাড়া জীবনানন্দের কবিতায় সুর হয়েছে এবং ক্যামেরায় দৃশ্যায়ন হয়েছে। তাঁর জীবনীভিত্তিক উপন্যাস ‘একজন কমলালেবু’ (শাহাদুজ্জামান) এর নাট্যরূপ দেয়া হয়েছে। মঞ্চে পারফর্মিং আর্টের মাধ্যমে কবিতার দৃশ্যায়ন সম্ভবত এই প্রথম। জীবনানন্দের কবিতার এত ‘লেয়ার’ যে একে মঞ্চে উপস্থাপন করা সত্যিই দুরূহ। এই চ্যালেঞ্জিং কাজটিই আমরা এই আয়োজনে করতে যাচ্ছি। মজার ব্যাপার হলো মঞ্চে পারফর্ম করবে ব্রজমোহন বিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থীরা। যেখানে প্রথমবারের মতো মঞ্চে পারফর্মিং আর্টের মাধ্যমে আকাশলীনা, বনলতা সেন, বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, অদ্ভুত আঁধার এক, ও আবার আসিব ফিরে এই ৫টি কবিতার দৃশ্যায়ন করা হবে।অনুষ্ঠানে কোনো প্রধান ও বিশেষ অতিথি নেই জানিয়ে তারা বলেন, সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, আমরা সবার উপস্থিতিও কামনা করছি। তবে যারা নিবিষ্ট মনে জীবনানন্দকে নানাভাবে চর্চা করছেন, ধারণ করছেন, তাদের মধ্যে বরিশালেই জন্ম এমন ৩ জন তরুণ আমীন আল রশীদ, সৌরভ মাহমুদ ও আব্দুল্লাহ মাহফুজ অভিকে এই আয়োজনে অতিথি করা হচ্ছে।আয়োজকরা জানান, চিরায়াত বাংলার রুপকে ইতিহাস আর বৈশ্বিক চেতনায় বিশ্লেষণ করেছিলেন কবি জীবনানন্দ দাশ। বাঙলায় প্রতিদিনের ঘটে যাওয়া ঘটনাকে তিনি এঁকেছেন তাঁর চোখে- যা সমানভাবে কৌতূহল জাগিয়েছে দেশি এবং ভিনদেশি পাঠককে। ‘দেখিব কাঁঠালপাতা ঝরিতেছে ভোরের বাতাসে’, ‘অবিরল শুপুরির সারি আঁধারে যেতেছে ডুবে’, ‘পৃথিবীর সব ঘুঘু ডাকিতেছে হিজলের বনে’,  ‘চালতা ফুল কি আর ভিজিবে না শিশিরের জলে’- এ দৃশ্যগুলি প্রত্যেক বাঙালির চেনা কিন্তু কী এক আশ্চর্য সম্মোহনী আকর্ষণ জাগায় পাঠক মনে! শুধুমাত্র ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থের জন্য প্রতিবছর দেশ-বিদেশের বহু জীবনানন্দ অনুরাগী তাঁর নিজ শহর এই বরিশালে ছুটে আসেন, যেমনিভাবে কবি নিজেও বারবার বাংলায় ফিরতে চেয়েছেন।কিন্তু বাস্তবতা হলো জীবনানন্দের শহরে তাঁর অনুরাগীরা এসে মোটামুটি একটা হোঁচট খান, জীবনানন্দের বাংলার এই ছবি আজ কল্পনায় শুধুমাত্র। বিলীন হয়ে যাচ্ছে তাঁর প্রিয় ঝাউবন, লাল সুড়কির ইটের রাস্তা, জলসিঁড়ি-ধানসিঁড়ি নদীর তীর, ঘুঘু, প্যাঁচা, গোলপাতার ছাউনি কিংবা নাটাফল। জীবনানন্দ চর্চা বা আয়োজনে সংশ্লেষণের যায়গাটি অনুপস্থিত। ‘যদি ধানসিঁড়ি না বাঁচে, জীবনানন্দ ফিরবে কার তীরে’- এই বোধ তৈরি হচ্ছে না। যে শহরে জলাশয় হত্যা হয়, জল-জমি-জঙ্গল লুট হয়ে যায়, সে শহরে জীবনানন্দের কবিতারা কীভাবে থাকেকবি জীবনানন্দ দাশের ১২৫তম জন্ম জয়ন্তীতে এই বোধের যায়গাটিতে ঝাঁকুনি দেয়ার একটা সময় হয়েছে। আমরা এমন একটি আয়োজন করতে চাই, যা দীর্ঘমেয়াদে এই শহরে একটি কার্যকরী অনুরণন সৃষ্টি করতে পারে।