শিবগঞ্জে ৩ সন্তানের জননী ফুফুকে নিঃসন্তান দেখিয়ে জমি হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা
হানিফ মেহমুদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের বিনোদপুরে অভিনব কৌশলে ৩৬ শতক জমি হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের রাধানগর মৌজার ৭টি দাগে এসব জমি হাতিয়ে নিতে নিজের ৩ সন্তানের জননী ফুফুকে নিঃসন্তান দেখিয়েছেন দখলকারীরা৷ ভারতে বসবাস করা মৃত ফুফুকে নিজেদের বাসায় মারা যাওয়ার মতো মিথ্যা তথ্য দিয়ে জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের মৃত মোসলায়ন বিশ্বাসের ছেলে সাইফুল আলম, আবুল কালাম আজাদ, শরিফুল ইসলাম ও তাদের লোকজনদের বিরুদ্ধে।জানা যায়, রাধানগর গ্রামের মৃত হাজ্বী হাশিমুদ্দিনের মোট ৫ ছেলে-মেয়ে। তারা হলেন- হুমায়ন বিশ্বাস, সেতাব উদ্দিন বিশ্বাস, মোসলায়ন বিশ্বাস, নাজির বিশ্বাস ও কায়মা খাতুন হকশাদী। এদের মধ্যে একমাত্র বোন কায়মা খাতুন হকশাদীর বিয়ে হয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিবাবাদের হোগলাবাড়ি কাঁকুড়ীয়া মোড় এলাকায়। সেখানেই তিনি পরলোকগমন করেন ২০০১ সালে। তার মৃত্যুর পর ২০১৬ সালে ভাইয়ের সন্তান ও তাদের সন্তানরা পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমিগুলো ভোগদখলে রাখতে তাকে নি:সন্তান দেখিয়ে একটি বণ্টননামা করে। এতে কায়মা খাতুনের (হকশাদী) তিন ভাইয়ের ৭ জনকে অংশীদার রাখা হয়। যদিও ৩২ জন অংশীদার হওয়ার কথা ছিল।বণ্টননামা অনুযায়ী কায়মা খাতুনের ভাই মোসলায়ন বিশ্বাসের ৫ ছেলে-মেয়ে, হুমায়ন বিশ্বাসের এক ছেলে ও নাজির বিশ্বাসের এক ছেলের বউকে রাখা হয়। ২ ছেলে ও এক মেয়ের জননী কায়মা খাতুনকে (হকশাদী) নি:সন্তান দেখিয়ে তৈরি করা বণ্টননামা অনুযায়ী জমি ভোগদখল করলেও ২০২৩ সালে এসে সেতাব উদ্দিন বিশ্বাস ও মোসলায়ন বিশ্বাসের উত্তরাধিকারীরা ইসলামী ফারায়েজ অনুযায়ী জমিগুলো দখলে নেয়ার চেষ্টা করে। এতে তারা উল্লেখ করেন, নাজির বিশ্বাস ও হুমায়ন বিশ্বাস কায়মা খাতুনের আগেই মারা যাওয়ায় তাদেরকে বঞ্চিত করার দাবি জানান।এমন অবস্থায় ২০২৩ সালে ভারতে গিয়ে মৃত কায়মা খাতুনের ১০ জন উত্তরাধীকারের কাছ থেকে ৩৬ শতক জমি কিনে নেন হুমায়ন বিশ্বাসের ছেলে আব্দুল মতিন ও নাজির বিশ্বাসের ছেলে মইনুদ্দিন বিশ্বাস। এরপর ৩৬ শতক জমি দখলে নেয়ার চেষ্টা করলে বাধা দেয় মোসলায়ন বিশ্বাস ও সেতাব উদ্দিনের ছেলেরা। সকল নথিপত্র ঠিক থাকা স্বত্বেও নানারকম ভয়ভীতি ও হুমকি, মারধর করছেন মৃত মোসলায়ন বিশ্বাসের ছেলে সাইফুল আলম, আবৃুল কালাম আজাদ ও শরিফুল ইসলাম এবং তাদের সন্তানরা।ক্রয় সূত্রে জমির মালিক মো. আব্দুল মতিন জানান, আমরা বৈধভাবে ভারতে গিয়ে সকল বৈধ নিয়ম মাফিক জমি কিনে নিলেও আইন বর্হিভূতভাবে আমাদেরকে বাধা দেয়ার পাশাপাশি জমি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। দখলে নিতে গেলে মিথ্যা মামলা ও হামলা করে দমিয়ে রাখছে আমাদেরকে। অথচ আমরা সকল আইন অনুযায়ী বৈধভাবে জমি কিনে নিয়েছি। কিন্তু তারা হয়রানি করতে মিথ্যা মামলা দিয়ে জমিতে যেতে দেয় না। ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়।স্থানীয় বাসিন্দা মো. মোশারফ হোসেন বলেন, ক্রয় সূত্রে জমির প্রকৃত মালিক আব্দুল মতিন ও মইনুদ্দিন। কিন্তু তাদের চাচাতো ভাই সাইফুল আলম, আবুল কালাম আজাদ, শরিফুল ইসলাম ও তাদের লোকজন এই জমিটি ইসলামী ফারায়েজ আইন দেখিয়ে জোরপূর্বক দখল করতে চায়। যদিও ১৯৭২ সালে সে আইন বাতিল হয়েছে। পাশাপাশি মৃত কায়মা খাতুনকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে মারা যাওয়া ও নিঃসন্তান দেখানো হলেও তা সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট। এমনকি ভারতে মারা যাওয়ার ডেথ সার্টিফিকেটও রয়েছে তাদের কাছে। বিষয়টি নিয়ে বারবার বসা হলেও সুরাহা হয়নি। আমরা চাই, তা দ্রুত নিরসন হোক।