• ঢাকা
  • |
  • রবিবার ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ সন্ধ্যা ০৬:২১:৩৩ (24-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • রবিবার ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ সন্ধ্যা ০৬:২১:৩৩ (24-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:

বিশ্ব ডিম দিবসের ভাবনা

মো. আনসারুজ্জামান সিয়াম: ডিম হলো আদর্শ প্রোটিন। দেহের সুস্বাস্থ্য গঠনে ও প্রাণীজ আমিষের চাহিদা পূরণের জন্য ডিমের অবদান অনস্বীকার্য। পুষ্টিবিদদের মতে, ডিম হলো পৃথিবীর অন্যতম সুপার ফুড। ডিমকে পরিপূর্ণ খাদ্যও বলা হয়।সর্বপ্রথম অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় ১৯৯৬ সালে ‘ইন্টারন্যাশনাল এগ কমিশন’ এর সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয় যে, প্রতিবছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার 'বিশ্ব ডিম দিবস' পালিত হবে। তারপর থেকে সারা বিশ্বে প্রতিবছর এই দিনটি একসঙ্গে উদযাপন করা হয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ২০১৩ সালে এই দিনটি পালন করা হয়ে থাকে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্যানুযায়ী, ১ বছরে একজন মানুষের ন্যূনতম ১০৪টি ডিম খাওয়া দরকার। তবুও আমাদের দেশের অধিকাংশই জনগণ এই প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার থেকে বঞ্চিত। প্রতিবছর সাধারণ জনগণ গড়ে ৪০-৫০টি ডিম খেয়ে থাকে।একটি ডিম বায়ুথলি, জার্মিনাল ডিস্ক, কুসুম, অ্যালবুমেন, চ্যালাজা, শেল নিয়ে গঠিত হয়। ডিমের সাদা অংশ ক্যালসিয়ামে ভরপুর থাকে। সাধারণত এটি হাড়কে শক্তিশালী ও মজবুত করতে সাহায্য করে। এছাড়াও অস্টিওপোরোসিস, রিকেটস ও হাড়ের অনেক গুরুতর সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। কুসুম বলতে বোঝায় ডিমের মাঝে অবস্থিত হলুদ অংশ, যা ভ্রুণের খাবার হিসাবে ব্যবহার করে। এটি সবার কাছেই অত্যন্ত জনপ্রিয়। একটি ডিমের প্রোটিনের ৪৩% কুসুম থেকে আসে। কুসুমে বেশিরভাগ অংশে রয়েছে ৯০% ক্যালসিয়াম। এছাড়াও রয়েছে আয়রন, ফসফরাস, জিংক, থায়ামিন, ভিটামিন বি ৬, ভিটামিন বি ১২ এবং প্যানথোথেনিক অ্যাসিড আছে। ডিমের কুসুমের আবরণ চর্বি জাতীয় দ্রবণীয় ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে থাকে। সেই সাথে অত্যাবশ্যকীয় কিছু ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা দেহ গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।নিয়মিত ডিম খাওয়ার উপকারিতা: ১. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে।২. দেহে শক্তি জোগায়।৩. ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।৪. পেশির ব্যথা কমাতে সহায়তা করে।৫. হৃৎপিণ্ড ভালো রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।৬. ডিমে থাকা লিউটিন ও জেক্সানথিন চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।৭. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।বিশ্বজুড়ে ডিমের ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকলেও ভ্রান্ত ধারণাও রয়েছে অনেক। তাছাড়া, ডিম নিয়ে অনেক সামাজিক কুসংস্কা ও রয়েছে। ডিমে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া থাকে এবং ডিম শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এরকম কথাবার্তা শোনা যায়। অথচ, ডিম ভালোভাবে সিদ্ধ করে খেলে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়ে যায়। ডিম পরিষ্কার জায়গায় থাকলে ও বিষ্ঠা না লেগে থাকলে সালমোনেলা দ্বারা আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা নেই। অনেকে বলে থাকে, পরীক্ষার দিন ডিম খেয়ে যেতে হয় না। এগুলো কথার কোনো ভিত্তি নেই।অনেকে ভেবে থাকেন যে, ডিম খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। কিন্তু এটা আসলে ভ্রান্ত ধারণা। পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডিমে অনেক কোলেস্টেরল আছে। কিন্তু সেটা আমাদের কোনও ক্ষতি করে না। বরং হার্টের উপকারী হাই ডেনসিটি কোলেস্টেরলের (HDL) পরিমাণ বাড়িয়ে হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া, সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা গিয়েছে, হার্ট অ্যাটাক বা ব্রেন স্ট্রোকের জন্য কোলেস্টেরলের ভূমিকা খুবই কম।এছাড়া, দেশি মুরগির ডিম ও ফার্মের ডিমের মধ্যে পুষ্টিগুণের কোনো পার্থক্য নেই। যে ডিমের আকার ও ওজন যতো বড়ো সেই ডিমে প্রোটিন, ফ্যাট ও অন্যান্য উপাদান ততো বেশি। খাবারের বৈচিত্র্য বিবেচনায় দেশি মুরগির ডিম স্বাদে অতুলনীয়। তাই দেশি মুরগির ডিম সবার কাছে পছন্দনীয়। খামারিদের সুযত্নে মুরগি পালনের কারণেই আমরা প্রতিবছর লক্ষ-কোটি ডিম পেয়ে থাকি। তাদের কষ্টের মাধ্যমেই আমরা পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারি। মুরগি খামারিদের প্রতি সরকারের সজাগ দৃষ্টি থাকা প্রয়োজন।দেশে প্রতিনয়ত নতুন নতুন তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। এসব তরুণদের সরকারি সহায়তা বিশেষ ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে দেশে ফার্মিং প্রকল্প উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনীতির চাকা ঘুরে দাঁড়াবে। এছাড়াও আর্থ সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে সমাজে বেকারত্ব হ্রাস পাবে। অনেক সময় চাহিদার থেকে অতিরিক্ত ডিম উৎপাদন হয় কিন্তু অজ্ঞতার কারণে তা নষ্ট হয়ে যায়। ডিমের প্রক্রিয়াজাত তথ্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে। ডিম এর ক্যালরি মান ও প্রোটিনের কার্যক্ষমতা বিষয়ক বিভিন্ন ধরনের সভা, সেমিনার ও পোস্টারিং আয়োজনের মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে।লেখক: শিক্ষার্থী, ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সস অনুষদ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার।