হাবিপ্রবিতে লাখ টাকার তার চুরি, ১ চোর আটক
হাবিপ্রবি প্রতিনিধি: হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) যেন বৈদ্যুতিক তার চুরির হিড়িক পড়েছে। শীতকালীন বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটরিয়াম-১ এর প্রায় লক্ষ টাকার তার চুরিসহ একাধিক চুরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে এক চোরকে ধরে পুলিশে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে নিরাপত্তা শাখা।২৫ ডিসেম্বর আনুমানিক দুপুর ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০তলা অ্যাকাডেমিক ভবনের পিছনে অ্যাকাডেমিক ভবনের পাওয়ার সাপ্লাই সাব-স্টেশনের বিদ্যুৎ এর আর্থিং লাইনের তামার তার কেটে চুরি করে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় নিরাপত্তা কর্মকর্তা খায়রুল আলম, নিরাপত্তা গার্ড প্রধান মো. আল আমিন এবং নিরাপত্তা প্রহরী মো. খবির উদ্দীন চোর মো. সোহেলকে ২টি তামার তার- যা একটি তামার পাতের সাথে সংযুক্ত অবস্থায় ও আনুমানিক ৩০ (ত্রিশ) কেজি ওজনের লোহার তারকাটা যা বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর পাশের বেড়া হিসেবে ছিল এবং তার কাটার কাজে ব্যবহৃত ২টি লোহার প্লাসসহ হাতে নাতে আটক করে এবং চোরের সহযোগী অপর ২ জন প্রাচীর টপকিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে আটক চোরকে দিনাজপুর কোতোয়ালি থানায় সোপর্দ করা হয়।১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় চালু হলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটরিয়াম-১ এর মেইন বোর্ডের প্রায় এক লক্ষ টাকার তামার তার চুরি হয়ে গেছে। ছুটির সময় সব ভবনে তালা লাগানো থাকার পরেও চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি ও কেন্দ্রীয় ভাণ্ডার শাখা থেকে জানায়, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখেছি অডিটোরিয়ামের নিচতলার ওয়াশরুমের ভেন্টিলেটরের কাঁচ দিয়ে চোর ঢুকেছে বলে মনে হয়েছে। তারপর চোর অডিটরিয়ামের মেইন বোর্ডের সাথে সকল সংযোগ তারগুলো কেটে সেখানেই তার পুড়িয়ে তামা বের করে নিয়ে গেছে। ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার তথ্যমতে ধারণা করা যাচ্ছে প্রায় এক লাখ টাকার তার চুরি হয়েছে।ইঞ্জিনিয়ারিং শাখা থেকে একই তথ্য নিশ্চিত করেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তারিকুল ইসলাম। শুধু ভবনের ভিতরের তার নয় মাটির নিচের তারও চুরি হয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়াও রাস্তার বাতি, প্রাচীরের বৈদ্যুতিক তার, সবমার্সিবোল পাম্পের তারসহ মটরও চুরি হয়েছে বিগত সময়ে।নিরাপত্তা শাখা থেকে জানা যায়, ৮৫ একরের ক্যাম্পাসে বর্তমানে ৭০ জন আনসার সদস্যসহ প্রায় ৭৫ জন নিরাপত্তা কর্মী নিয়োজিত আছে। আবার আবাসিক হলগুলোর রয়েছে আলাদা নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মী। এছাড়াও সার্বক্ষণিক দেখাশোনার জন্য দুইজন নিরাপত্তা কর্মকর্তাও রয়েছে।নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানায়, আনসার সদস্যরা তাদের দায়িত্বে অবহেলা করায় এসব চুরির ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও ৩ শিফটে ডিউটি হওয়ায় নিরাপত্তা কর্মীর সংকট থাকায় সব দিক কভার করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিতের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এবং সেভাবেই নিরাপত্তা কর্মীদের নির্দেশনা দিচ্ছি এবং নিয়মিত টহল দিচ্ছি। এছাড়াও ইঞ্জিনিয়ারিং শাখা কোথায় কোথায় তাদের বৈদ্যুতিক তার, বাল্বসহ অন্যান্য সামগ্রী রাখে সেগুলো নির্দিষ্টভাবে আমাদের অবহিত করে না, যার ফলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। আর আমাদের যেসব জায়গায় চুরি হচ্ছে সেসবের অধিকাংশই সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় পড়ে না, পড়লেও চোরকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয় উঠে না। আমরা ইতোমধ্যেই হাতেনাতে একজন চোরকে ধরতে সক্ষম হয়েছি। চোরকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে এবং তার বিরুদ্ধে দিনাজপুর কোতোয়ালি থানায় মামলাও করেছি। আশা করা যাচ্ছে তার মাধ্যমে চোরের পুরো গ্যাংকে ধরা সম্ভব হবে।বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, গভীর রাতে বা খুব ভোরে প্রধান ফটকসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় নিরাপত্তা কর্মীদের দেখা যায় না। এছাড়াও ক্যাম্পাসে কে ঢুকছে কে বেরুচ্ছে এসবেও অবহেলা করে নিরাপত্তা কর্মীরা।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্য জানায়, ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারীরা অবহেলায় তার ঝুলিয়ে রাখে, যত্রতত্র ফেলে রাখে। এছাড়াও আমাদের অবগতও করে না যার ফলে নজর রাখা সম্ভব হয় না। এছাড়া ভবনগুলো বড় হওয়ায় আর শিফটে লোক কম হওয়ায় এক ভবনের সামনে থাকলে ভবনের পিছন সাইডে নজর রাখা সম্ভব হয় না।বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব জায়গা থেকে চুরির ঘটনা ঘটেছে এসবের তথ্য বাইরের মানুষের জানার কথা নয়। অবশ্যই এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কর্মকর্তা কর্মচারীর হাত রয়েছে যে এসব বিষয় ভালো জানে।এ বিষয়ে প্রক্টর প্রফেসর ড. শামসুজ্জোহা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাকাঙ্ক্ষিত চুরির ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। ইতোমধ্যেই আমরা একজন চোর ধরতে সক্ষম হয়েছি এবং পুলিশের কাছে সোপর্দ করে থানায় মামলা করেছি। তাকে রিমান্ডে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। আশা করছি তার থেকেই সকল তথ্য পাওয়া যাবে।