• ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ রাত ০২:১৬:৩২ (22-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ রাত ০২:১৬:৩২ (22-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:

শেরপুরে দেখা মিলছে না জাতীয় পাখি দোয়েলের

আরফান আলী, শ্রীবরদী (শেরপুর) প্রতিনিধি: শেরপুরের শ্রীবরদী ও পার্শবর্তী উপজেলাগুলোয় একসময় জাতীয় পাখি দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির দেখা মিলতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে এখন আর চিরচেনা সেসব পাখির দেখা মিলছে না। গ্রামের মেঠো পথ এখন হয়ে গেছে পাখিশূন্য । পরিবেশ দূষণ, নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগের ফলে পাখির বিচরণক্ষেত্র ধ্বংস হয়ে গেছে। খাদ্য সংকটের কারনেও দেশে পাখির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। অন্যদিকে জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবেও বিলুপ্তি হচ্ছে দোয়েলসহ অন্যান্য প্রজাতির পাখি।জানা যায়, কয়েকবছর আগেও স্থানীয়দের ঘুম ভাঙ্গতো পাখির ডাকে। ভোরের শুরুতে আর সন্ধ্যার আলো-আবছায়ায় পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠতো গ্রামের পথ-ঘাট। পাখির কলকাকলিই বলে দিতো নির্মল সকাল কিংবা সন্ধ্যার আগমনী। কিন্তু চিরচেনা সেই পাখির ডাক এখন গ্রাম্য প্রতিবেশ থেকে হারিয়েই গেছে।কথা হয় স্থানীয় বালুঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলরুবা খাতুনের সাথে। তিনি জানান, দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং আমাদের স্মৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিভিন্ন পাখির ডাক ও সুর। যেগুলো আমাদের মুগ্ধ করতো তা ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে পকৃতি থেকে। বিশেষ করে দোয়েল এখন আর দেখাই যায় না। বাড়ির আনাচে-কানাচে যদি গাছ লাগানো যায়, তবে পাখির অভয়ারণ্য তৈরি হবে। পাখি সংরক্ষিত থাকবে, ফিরবে পরিবেশের ভারসাম্য।বায়োজেষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- একসময় দোয়েল, ময়না, কোকিল, শালিক ও চড়ুইসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির পাখি গ্রামমাঞ্চলে দেখা গেলেও এখন এগুলো হারিয়ে গেছে প্রকৃতি থেকে। অনেকেই তাদের স্মৃতি রোমন্থনে বলেন কোন এক সকালে আমের ডালে শালিকের কিচিরমিচির কিংবা ঝিংগের মাচানে দোয়েলের শিশ দেয়ার কথা। যদিও পাখি এখন ঠাই নিয়েছে সৌখিন পাখিপ্রেমীদের ঘড়ে কিংবা ড্রইংরুমে।কথা হয় কয়েকজন সৌখিন পাখি পালনকারীর সাথে। তারা জানায়, দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এখন বিলুপ্তির পথে। নতুন প্রজন্মের অনেকেই হয়ত দোয়েল দেখতে কেমন তা জানে না। এছাড়া শিকারীদের কারনেও পাখিশূন্য হয়ে পড়েছে বনাঞ্চল। অনেকেই এখন বাড়িতে পালন করছেন সৌখিন বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। নতুন প্রজন্ম অন্তত পাখি সম্পর্কে ধারনা পায় সে জন্যই এ প্রয়াস।শেরপুরের কৃষক আকবর হোসেন হাওলাদার বলেন, জমিতে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে অনেক পাখিই মারা পড়ছে। আবার খাদ্য ও আবাসস্থল কমে যাওয়ায় পাখির বংশবিস্তার বাধাগ্রস্থ হচ্ছে, ফলে কমে যাচ্ছে পাখি। বেশি মুনাফার আশায় চোরা শিকারীর ফাঁদেও প্রাণ হারাচ্ছে পাখি। ভয় পেয়ে অনেকসময় পাখি অন্যত্রও চলে যাচ্ছে।শ্রীবরদী সরকারি কলেজের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী হাসানুজ্জামান জানান, প্রকৃতি সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক ইউনিয়নের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশের জাতীয় পাখি দোয়েল বিলুপ্ত পাখির কাতারে পড়ে না। এমনকি এরা বিলুপ্তির শঙ্কাতেও নেই। আইইউসিএনের ভাষ্যমতে জাতীয় পাখি দোয়েল এখনও বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে আছে। নিকট ভবিষ্যতে এ পাখি বিলুপ্তির কোন শঙ্কা নেই।তবে প্রাকৃতিক দূর্যোগ, ফসলে কীটনাশক অপব্যবহার, আবাসস্থল কমে যাওয়া, ফাঁদে আটকানো ইত্যাদি কারণে তার সংখ্যায় কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সব আবাসেই দোয়েলকে দেখা যায় বলে একে জাতীয় পাখি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। উপমহাদেশের প্রখ্যাত পাখি বিশারদ প্রফেসর কাজী জাকের হোসেনই প্রথম দোয়েলকে জাতীয় পাখি করার প্রস্তাবনা করেন।