মাদ্রাসার নারী সুপারকে মারধর ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা
স্টাফ রিপোর্টার, নেত্রকোনা: নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার পদুরকান্দা দাখিল মাদ্রাসার অফিসকক্ষে ভারপ্রাপ্ত নারী সুপারকে প্রকাশ্যে চড় থাপ্পড়, মারধর ও শ্লীলতাহানি করেন একই মাদ্রাসার এক সহকারী শিক্ষক। ২ জুন রোববার দুপুরে উপজেলার আগিয়া ইউনিয়নের পদুরকান্দা দাখিল মাদ্রাসার অফিস কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষিকা সুলতানা বেগম বাদী হয়ে ৪ জুন মঙ্গলবার রাতে অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক মো. আল মামুনের বিরুদ্ধে পূর্বধলা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মো. আল মামুন পূর্বধলা উপজেলার মেঘশিমুল (বিশ্বাসপাড়া) গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে।মারধরের শিকার শিক্ষিকা বলেন, ‘তিনি পদুরকান্দা দাখিল মাদ্রাসায় সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। একই মাদ্রাসায় সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন মো. আল মামুন। গত পহেলা জানুয়ারি ২০২৪ সাল থেকে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এনিয়ে সহকারী শিক্ষক আল মামুনের মনে ক্ষোভ ছিল।ক্ষোভের কারণে মাদ্রাসা সুপারকে মান্য না করে উগ্র আচরণ ও অশ্লীল কথাবার্তা বলে অন্যান্য শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের সামনেই সম্মানহানি করার চেষ্টা করেন। বিষয়টি জানালে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কয়েকবার সতর্ক করেন আল মামুকে। কিন্তু শিক্ষক মামুন সংশোধন না হয়ে গত ২ জুন রোববার দুপুরে অফিস কক্ষে ছুটির বিষয় নিয়ে অন্যান্য শিক্ষকদের সামনে ভারপ্রাপ্ত সুপারকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে কথা বলতে থাকেন। ভারপ্রাপ্ত সুপার প্রতিউত্তর করায় ক্ষিপ্ত হয়ে সামনের টেবিলে থাকা পেপার ওয়েট ছুড়ে মারলে চোখের উপর লেগে জখম হন তিনি। এরপরও থামেননি মামুন। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই কাছে এসে সুপারের গালে পরপর কয়েকটি থাপ্পড় মেরে রক্তাক্ত করেন। উপস্থিত শিক্ষকদের সামনেই ভারপ্রাপ্ত সুপারের পরনের কাপড় চোপড় ধরে টানা হেঁচড়া করে শ্লীলতাহানি করেন।এ ঘটনার পর শিক্ষিকা সুলতানা বেগম পূর্বধলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। বিষয়টি তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে জানান।প্রতক্ষ্যদর্শী সহকারী শিক্ষিকা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, তার চোখের সামনে ভারপ্রাপ্ত সুপার সুলতানা বেগমকে এলোপাথাড়িভাবে মারধর করে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে সহকারী শিক্ষক আল মামুন। একজন নারীকে এইভাবে লাঞ্ছিত করার বিচার চান তিনি।উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘ঘটনা জানার পরপরই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে।’উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. খবিরুল আহসান বলেন, ‘তৎক্ষণাৎ ওই শিক্ষিকা আমার কাছে এসেছিলেন। আমি থানায় পাঠিয়েছি, শিক্ষিকা থানায় মামলা দায়ের করেছেন। ইতোমধ্যে শিক্ষিকা আমার কাছে একটি অভিযোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন। অভিযোগ পেলে ঘটনা তদন্ত সাপেক্ষে আমরা আমাদের অফিসিয়াল সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো।’এ ব্যাপারে সহকারী শিক্ষক আল মামুন বলেন, ‘কোনও মারপিটের ঘটনা ঘটেনি। নিজেদের মধ্যে একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। কথা কাটাকাটি হয়েছে এছাড়া আর কিছু না। কথা কাটাকাটির জন্য আমি অনুতপ্ত, এই জন্য আমি ভারপ্রাপ্ত সুপারের কাছে ক্ষমাও চেয়েছি।’আপনি এধরনের ঘটনা না ঘটালে আপনার বিরুদ্ধে শিক্ষিকা কেন মামলা করেছেন, পুলিশ কেন মামলা নিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে মামুন বলেন, ‘মামলা দায়ের করেছেন এটি তার ব্যক্তিগত বিষয়, হয়তো আমার প্রতি ক্ষোভ থাকতে পারে। মারধর ও শ্লীলতাহানির কোনো ঘটনা ঘটেনি। তিনি মিথ্যাচার করছেন।’পূর্বধলা থানার ওসি মুহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘ওই শিক্ষিকা লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরপরই মামলা হয়েছে। অভিযুক্ত মো. আল মামুন আদালত থেকে জামিন নিয়ে থানায় রিকল জমা দিয়ে গেছেন।’