• ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ রাত ১১:২৫:৪৫ (21-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ রাত ১১:২৫:৪৫ (21-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:

নোবিপ্রবির শিক্ষার্থী সিয়ামের মৃত্যু নিয়ে অপরাজনীতির অভিযোগ

নোবিপ্রবি প্রতিনিধি: নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষার্থী মো. মোস্তফা তারেক সিয়ামের আকস্মিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অপরাজনীতি করার অভিযোগ উঠেছে। এর মাধ্যমে ছাত্রলীগের পুনর্বাসন হচ্ছে বলে দাবি করেন অনেক শিক্ষার্থী। এ ছাড়াও আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে বিভিন্ন পক্ষ তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন শিক্ষার্থীরা। তবে মো. মোস্তফা তারকে সিয়ামের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কোনো ইস্যু বা আন্দোলন না করার অনুরোধ জানান তার সহপাঠীরা।৩০ অক্টোবর বুধবার সন্ধ্যায় নোবিপ্রবির শিক্ষা প্রশাসন বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী মো. মোস্তফা তারেক সিয়াম হার্ট অ্যাটাকে আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। তারেক সিয়ামের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে চলা নোবিপ্রবির মেডিকেল সেন্টারের অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। পরবর্তীতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারে সামনে বিক্ষোভ মিছিল করে। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে একটি পক্ষ তাদের রাজনৈতিক ফয়দা হাসিলের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজনৈতিক ফায়দার অংশ হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগকে পুনর্বাসন, ভিন্ন উপায়ে ছাত্র রাজনীতি প্রতিষ্ঠা, ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠার দাবি উপস্থাপন করার মতো অভিযোগ সামনে এসেছে।ঐদিন রাতে ছাত্র বিক্ষোভের সময় ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে অভিযুক্ত  নোবিপ্রবির আইসিই বিভাগের ২০১৮-১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী আরমান হোসেনকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের নেতৃত্ব এবং দাবিদাওয়া পেশ করেছে বলে সামাজিক গণমাধ্যমে অভিযোগ করে পোস্ট প্রদান করেছে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়াও ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মীকে ঐদিন আন্দোলনে দেখা যায়। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর নোবিপ্রবি ছাত্রলীগের সাথে সংযুক্তির বিভিন্ন ছবি এবং ছাত্রলীগ নেতাদের পক্ষে বিভিন্ন পোস্টের ছবি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপে ছড়িয়ে পড়েছে। ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার বিপ্লবের পর  নোবিপ্রবি ছাত্রলীগ সভাপতি নাঈম রহমানের কক্ষ ভাঙচুর করা হলে আরমানের প্রতিবাদে এবং সহমর্মিতা জানিয়ে পোস্ট করেন। অভিযুক্ত আরমান হোসেনকে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বপ্নিল নাঈমের অনুসারী হিসেবে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতো বলে জানা যায়। তবে জুলাই বিপ্লবের শেষের দিকে ১ আগস্ট এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে নিজেকে ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে সরে আসার বিষয় জানান অভিযুক্ত আরমান হোসেন।এছাড়াও সিয়ামের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে আন্দোলনে বিভিন্ন ছাত্রকে নেতৃত্বের ভূমিকায় আসতে দেখা গেলেও সিয়ামের গায়েবানা জানাজা এবং দোয়া অনুষ্ঠানে তাদেরকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেছে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, সিয়ামের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে একটি পক্ষ নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের কিছু কর্মীকে ক্যাম্পাসের পুনর্বাসন করার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সংস্কারের পাশাপাশি তড়িঘড়ি করে ছাত্রসংসদের দাবি আদায়ের চেষ্টা করার জন্য সিয়ামের মৃত্যুকে ইস্যু হিসেবে ব্যবহার করেছে।নোবিপ্রবির ওশানোগ্রাফি বিভাগের ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোজাম্মেল হাসান রিমন বলেন, নোবিপ্রবির সিয়াম ভাইয়ের মৃত্যুকে ব্যবহার করে অনেকেই লাইমটাইটে আসার চেষ্টা করছে। তার জন্য কত আহাজারি। কিন্তু তার জন্য আয়োজিত দোয়া মাহফিলে কাউকে দেখি নাই।নোবিপ্রবির ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগ মিয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে বলেন, সিয়ামের মরদেহকে ছাত্রলীগের মতো রাজনীতি করা হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে সিয়ামের মৃত্যুকে ব্যবহার করে একটি নিষিদ্ধ গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করেছে।ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মাহবুবুল আলম তারেক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে বলেন, সিয়ামের মৃত্যু অবশ্যই কষ্টের এবং আল্লাহ তার জন্য জান্নাত কবুল করুক। কিন্তু এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে জুলাই বিপ্লবের শহিদদের সাথে বেইমানি এটা কখনো মেনে নেয়া যায় না।বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসিব আহমেদ বলেন, আমরা অবশ্যই ছাত্র সংসদ নির্বাচন চাই। তবে তার আগে পতিত স্বৈরশাসকের দোসর দালালদের বিচার এবং ক্যাম্পাসে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত থাকতে হবে।বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক ইশতিয়াক জামিল বলেন, ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ সবসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ইমোশনকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য কাজ করতো। সিয়ামের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মাইক হাতে অনেকেই সামনে আসতে দেখা গেলেও পরক্ষণেই সিয়ামের গায়েবানা জানাজায় ও দোয়া অনুষ্ঠানে তাদের আর পাওয়া যায়নি।অন্যদিকে অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মী আরমান হোসেন ১ অক্টোবর তার এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, আমাকে যারা ছাত্রলীগের কর্মী বলেছেন তাদের সাথে আমিও একমত। আমি কর্মী ছিলাম। এই ক্যাম্পাসের অধিকাংশ স্টুডেন্ট বাধ্য/অবাধ্য হয়ে ছাত্রলীগের সাথে জড়িত ছিলো। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে - আমি কি জুলাই আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ছিলাম? আমি শুরু থেকেই এই আন্দোলনের পক্ষে ছিলাম।সিয়ামের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অপরাজনীতি ঘটনার বিষয়ে নোবিপ্রবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. নুর হোসেন বাবু বলেন, নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগকে কেউ পুনর্বাসনের চেষ্টা করলে আমরা অবশ্যই সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে এর প্রতিরোধ করবো। আমরা ক্যাম্পাসে  ছাত্ররাজনীতি চাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির ভিত্তিতে শিক্ষার্থী বান্ধব ছাত্ররাজনীতি।অন্যদিকে নোবিপ্রবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক জাহিদুল ইসলাম হাসান বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে কখনোই ছাত্রলীগকে পুনর্বাসন করতে দিবো নাহ। আমরা ছাত্রলীগের সাথে লড়াই করেই জুলাই বিপ্লবকে সফল করেছি। ছাত্রলীগের সাথে জড়িত অনেক নেতাকর্মী জুলাই বিপ্লবের অংশগ্রহণ করেছিল।এদিকে মৃত নোবিপ্রবি শিক্ষার্থী সিয়ামের বিভাগের সহপাঠীরা ক্যাম্পাসে সকল পক্ষকে তার মৃত্যুকে ইস্যুকে যে কোনো রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল কিংবা কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। তারা বলেন, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে আমরা আছি, সেগুলো আমাদেরও প্রাণের দাবি। কিন্তু সবার কাছে একটা অনুরোধ থাকবে সিয়ামের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যাতে কেউ কোনো ইস্যু তৈরি না করে।