• ঢাকা
  • |
  • সোমবার ১১ই ফাল্গুন ১৪৩১ ভোর ০৪:২৯:২৫ (24-Feb-2025)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • সোমবার ১১ই ফাল্গুন ১৪৩১ ভোর ০৪:২৯:২৫ (24-Feb-2025)
  • - ৩৩° সে:

গার্মেন্টস ছেড়ে এক পলিনেটেই ভাগ্য বদলেছে ইলিয়াসের

নলডাঙ্গা (নাটোর) প্রতিনিধি: উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিরাপদ উপায়ে অধিক ফলন নিশ্চিত করতে নাটোরে নলডাঙ্গায় শুরু হয়েছে পলিনেট হাউজ ব্যবস্থাপনা।বিভিন্ন সবজির চারা, ঔষধীয় চারা, ফুল-ফলের রোগ মুক্ত চারার নিশ্চয়তা নিয়ে কৃষকদের মাঝে সকল সেরা জাতের বিষ মুক্ত-রোগ মুক্ত চারা দিয়ে চাষাবাদ করে সফলতার আশায় আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এই পলিনেট হাউজ স্থাপন করা হয়।উপজেলা মির্জাপুর দিয়ারপাড়া এলাকায় আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে নাটোর নলডাঙ্গা কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করেছেন উদ্যোমী চাষি ইলিয়াস শেখ।সরজমিনে তার নার্সারি ঘুরে দেখা গেল, ইলিয়াছের নার্সারির পলিনেট হাউসে ও উন্মুক্ত পরিবেশে চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। তার নার্সারিতে সবজিই বেশি। এর মধ্যে রয়েছে রঙিন ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন, মরিচ, ক্যাপসিকাম, ব্রকলি, বিটরুট, ওলকপি, বোম্বাই মরিচ, নাগা মরিচ, কুমড়া, পেঁপে, ধুন্দুল। ফলের মধ্যে রয়েছে জাম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, পেয়ারা, আঙুর, ডালিম, বিভিন্ন জাতের আম প্রভৃতি। এ ছাড়া ফুলের মধ্যে আছে গোলাপ, মাধবীলতা, কুঞ্জলতা, গোল্ডেন শাওয়ার। ঔষধি গাছগাছড়ার মধ্যে হরীতকী, লজ্জাবতী, অশোক ও অ্যালোভেরা উল্লেখযোগ্য।ইলিয়াস শেখ বলেন, ‘আমি মা-বাবা একমাত্র ছেলে আর একটি বড় বোন রয়েছে। আমি এসএসসির পর কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। বড় বোনের বিবাহ হয়ে গেছে। কিন্তু পরিবারে অভাব-অনটন জেঁকে বসায় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার আগেই ঢাকায় পোশাক কারখানায় যোগ দিই। কিন্তু মানিয়ে নিতে না পেরে মির্জাপুর গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসি। বাবার দেওয়া কিছু পুঁজি নিয়ে মুদি দোকান শুরু করি। পাশাপাশি ছোট পরিসরে বিভিন্ন ফলের নার্সারি শুরু করি।’তিনি আরও বলেন, ‘নলডাঙ্গা কৃষি অফিসের মাধ্যমে সুযোগ হয়ে উঠে পলিনেট হাউজের মাধ্যমে উন্নত জাতের সবজি চারা উৎপাদনের। তাতে প্রথমবারই ভালো সাড়া পাই। এখন আমার পলিনেটে ১০ জন লোকের কর্ম সংস্থানের ব্যাবস্থা হয়েছে। পরিবার নিয়ে ভালো দিন কাটছে। পলিনেট হাউজ থেকে উৎপাদিত চারা নিয়ে উপজেলা কৃষি মেলায় টানা তিনবার (২০২৩-২৪) পুরস্কার পেয়েছি। এই পুরস্কারের ফলে উৎসাহ বেড়ে যায়। সরকারি খরচে ২০২৩ সালে ২৭ শতক জমিতে পলিনেট হাউজ তৈরি করে দেওয়া হয়। শুরু করি, আধুনিক পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন। লিজকৃত জায়গাতে এই পলিনেট হাউজ ছাড়িয়ে এখন সে তিন বিঘা বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বিভিন্ন সবজি ও ফল ও ওষুধি চারা উৎপাদন করছি।’ইলিয়াস শেখ বলেন, ‘চারা উৎপাদনে বৈরী আবহাওয়া সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। পলিনেট হাউজে সারা বছরই চারা উৎপাদন সম্ভব। রোগবালাই ও পোকামাকড়ের উপদ্রব কম হয়। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।’প্রথমদিকে সাত প্রজাতির সবজির চারা উৎপাদনের মধ্য দিয়ে শুরু করলেও এখন তিনি ফুল, ফল, সবজি ও ঔষধি মিলে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ জাতের চারা উৎপাদন করেন। মানসম্মত চারা সরবরাহ করে তিনি ইতিমধ্যে কৃষকের মন ছুঁয়েছেন। তাই নার্সারির নামও দিয়েছেন ‘মনছোঁয়া পলিনেট হাউস অ্যান্ড নার্সারি’। পত্রপত্রিকাসহ বিভিন্ন চ্যানেলে ফেসবুক, ইউটিউব ও অনলাইন মার্কেটে তিনি এখন পরিচিত মুখ।নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসার মো. কিশোয়ার হোসেন বলেন, এই পলিনেট হাউজ ব্যবস্থা স্থাপনে সরকারের ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৭ লাখ টাকা, যা সরকারি প্রকল্পের তত্বাবধানে বিদেশি টেকনিশিয়ান দ্বারা বানানো। যা এই কৃষক ইলিয়াস পেয়েছেন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। ইলিয়াস শেখ ছোট একটি মুদি দোকান করতেন, পাশাপাশি কৃষি বিষয়ে আগ্রহী দেখে আমরা তাকে পলিনেটের ব্যবস্থা করি। আজ তিনি আমাদের পরামর্শে ও নিজের প্রচেষ্টায় অনেক দূর এগিয়ে গেছেন।’