• ঢাকা
  • |
  • রবিবার ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ সকাল ১১:০৯:৩০ (24-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • রবিবার ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ সকাল ১১:০৯:৩০ (24-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:

বাদ্যযন্ত্রের জাদুঘর

সাদ্দাম উদ্দিন আহমদ: ময়মনসিংহের নবাব আলী একজন সংগীতপ্রেমী মানুষ ছিলেন। ময়মনসিংহের বড়বাজার এলাকায় ১৯৪৪ সালে  ‘নবাব অ্যান্ড কোং’ নামে একটি বাদ্যযন্ত্রের দোকান দেন। এটি ছিল ময়মনসিংহ শহরের বাদ্যযন্ত্রের দ্বিতীয় দোকান। কালের পরিক্রমায় বাদ্যযন্ত্রের জাদুঘর তৈরি হয়েছে সেই দোকান থেকেই।‘নবাব অ্যান্ড কোং’র প্রতিষ্ঠাতা নবাব আলী মারা যাওয়ার পর তার ছেলে জালাল উদ্দিন বাদ্যযন্ত্রেরর দোকানটি পরিচালনা করতে থাকেন। জালাল উদ্দিনের ছেলে রেজাউল করিম ছোটবেলা থেকেই বাবার সঙ্গে দোকানে আসতেন। ১৯৯০ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পর রেজাউল করিম বাদ্যযন্ত্রের ব্যবসায় বেশি মনোযোগী হন।২০২১ সালে মারা যান জালাল উদ্দিন। জালাল উদ্দিন মারা যাওয়ার পর তার ছেলে রেজাউলকে সবকিছুর দায়িত্ব বুঝে নিতে হয়। রেজাউল করিম হয়ে ওঠেন নবাব অ্যান্ড কোং প্রতিষ্ঠানের প্রাণ।অল্প বয়স থেকেই রেজাউল বাদ্যযন্ত্রের প্রতি বিশেষ আগ্রহী হয়ে উঠেন। বিশেষ করে, নানা রকম দেশীয় পুরানো বাদ্যযন্ত্র সংগ্রহ করে তুলতে থাকেন দোকানে। দোকানে লোকজ বাদ্যযন্ত্রের সংগ্রহ বাড়ানোটা তার নেশায় পরিণত হয়। ফলে নবাব অ্যান্ড কোং প্রতিষ্ঠানে বাউল ও লোকজ গানের শিল্পীদের আড্ডা বাড়তে থাকে। বাউলদের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে দেশের নানা প্রান্তে ছুটে গিয়ে রেজাউল সংগ্রহ করতে থাকেন নানা ধরনের বাদ্যযন্ত্র। সংগ্রহ বাড়তে বাড়তে অনেক বেশি হয়ে যাওয়ায় নিজের দোকানের পাশে আরও একটি ঘর ভাড়া নিয়ে সংগ্রহ করা সব বাদ্যযন্ত্র সেখানে রাখতে থাকেন। প্রথম দিকে এভাবেই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায় রেজাউলের সংগ্রহশালা।রেজাউলের সংগৃহী বিচিত্র বাদ্যযন্ত্রের প্রথম প্রদর্শনী ২০০৮ সালে ময়মনসিংহে অনুষ্ঠিত জয়নুল উৎসবে।পরবর্তী সময়ে বাদ্যযন্ত্র প্রদর্শনীর আমন্ত্রণ পেতে থাকেন বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠানে। রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বেঙ্গল  উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবেও ২০১৬ সালে তার পুরোনো বাদ্যযন্ত্রের প্রদর্শনী স্থান পায়।রেজাউল করিম বলেন, জাদুঘর করার চিন্তা মাথায় আসে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত অনুষ্ঠানে প্রদর্শনের পর। তখন থেকেই সংগ্রহশালা তৈরির জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন তিনি। স্বপ্নের সংগ্রহশালা ২০২০ সালে ময়মনসিংহ নগরের আঞ্জুমান ঈদগাহ মাঠের বিপরীত পাশে ভাড়াবাড়িতে প্রতিষ্ঠা পায়। বর্তমানে তার সংগ্রহশালায় ৬০০ বাদ্যযন্ত্র আছে। তিনি এ সংগ্রহ শালাটির নাম দিয়েছেন ‘এশিয়ান মিউজিক মিউজিয়াম’।রেজাউলের এশিয়ান মিউজিক মিউজিয়ামে ৩০০ বছরের পুরনো সারিন্দা ছাড়াও যা আছে তার মধ্যে অন্যতম ডুগডুগি, পাখোয়াজ, শিঙ্গা, বাঁশি, করতাল, মাদল, খঞ্জনি, ডফ, কাঁসর বা কাঁসি, ডুগিসহ লোকজ নানা ধরনের বাদ্যযন্ত্র। বাদ্যযন্ত্র সংগ্রহ করতে ছুটে গেছেন দেশের নানা প্রান্তে। কখনো রান্নাঘরে; আবার কখনো গোয়ালঘরেও মিলেছে বিলুপ্তপ্রায় এসব বাদ্যযন্ত্র।পুরোনো বাদ্যযন্ত্রের সংগ্রহশালা করার পর এবার ময়মনসিংহে একটি সংগীত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন দেখেছেন রেজাউল। বিশ্ববিদ্যালয় করা যত কঠিন কাজই হোক, তাঁর এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আমৃত্যু চেষ্টা করে যাবেন তিনি।