ফকিরহাটে বাণিজ্যিকভাবে ব্রি ধান-১০২ চাষে সফল কৃষকরা
বাগেরহাট (পশ্চিম) প্রতিনিধি: বাগেরহাটের ফকিরহাটে এবার প্রথমবার বাণিজ্যিকভাবে উচ্চফলনশীল ব্রি ধান-১০২ চাষ করে কৃষকরা সাফল্য হয়েছে। অন্য ধানের পাশাপাশি কৃষকরা এই ধান চাষ করে অনেক লাভবান হয়েছেন। কৃষি বিভাগ বলছেন নতুন জাত এই ধান দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এসব কৃষককে সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হয়েছে।উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, উপজেলায় এবার অন্য ধানের পাশাপাশি ৫০ জন কৃষক প্রথমবার বাণিজ্যিকভাবে উচ্চফলনশীল জাতের ব্রি ধান-১০২ চাষ করেছেন। উপজেলায় মোট ৪৫ হেক্টর জমিতে এই ধানের চাষ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল ও পুষ্টি সমৃদ্ধ ব্রি-১০২ জাতের নতুন ধান খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষিতে বিপ্লব ঘটাবে। এরই মধ্যে ধানটির বাণিজ্যিকভাবে চাষে মিলেছে সাফল্য।মাসকাটা ব্লকের কৃষক নাঈম শেখ জানান, তিনি এক একর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ব্রি-১০২ ধান চাষ করে তিনি লাভবান হয়েছে। অন্য ধানের তুলনায় অনেক বেশি ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগ সকল ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করেছেন। এক একর জমিতে কৃষক হায়দার আলী ও মোজাফফার শেখকে সাথে নিয়ে ব্রি-ধান-১০২ চাষ করেছেন। তারা ধান কর্তন শেষে এগুলো বাজারে ধানের বীজ হিসেবে বিক্রি করবেন। এতে তারা আর্থিকভাবে অনেক লাভবান হবেন বলে জানান।বেতাগা মাসকাটা ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নবনিতা জোর্দ্দার জানান, এ বছর প্রোগ্রাম অন অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন, এন্টারপ্রেনরশিপ্যীান্ড রেসিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার) প্রকল্পের আওতায় কৃষকরা ব্রি ধান-১০২ চাষ করেছে কৃষকরা। এসব কৃষকদের বীজ, সার, কীটনাশক, বালাইনাশক, সহ আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। এছাড়া কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক দেখভাল করেন।এদিকে বুধবার বিকেল ৫টার দিকে মাসকাটা কৃষক নাঈম শেখের ক্ষেত পরিদর্শন করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো, রফিকুল ইসলাম। এসময় তার সাথে ছিলেন ঢাকা বিসিআরএল এর কনসালটেন্ট ড. খন্দকার মাহফুজুর হক, খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো, নজরুল ইসলাম, বাগেরহাট খামারবাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মোতাহার হোসেন, ব্রি গোপালগঞ্জ কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. রোমেল বিশ্বাস, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ সাখাওয়াত হোসেন, অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা নুসরত জাহানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। তারা ব্রি ধান-১০২ ফলন দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন।এদিকে এদিন এই ধানের নমূণা সংগ্রহ করেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। সেখানে দেখা গেছে, কৃষক নাঈম শেখের ২০ বর্গ মিটারে ১৭ কেজি ধান উৎপাদন হয়েছে। সেই মোতাবেক এক হেক্টরে ধান উৎপাদন হয়েছে ৭.০৫ টন। অপরদিকে কাঠালতলা কৃষক আজিজ শেখের ২০ বর্গমিটারে ধান উৎপাদন হয়েছে ১৭ কেজি। সেই হিসাবে হেক্টরে ৮.৯৫ টন ধান উৎপাদন হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ সাথাওয়াত হোসেন বলেন, ব্রি ধান-১০২ আধুনিক উফশী ধানের সকল বৈশিষ্ট্য রয়েছে এই ধানে। অঙ্গজ অবস্থায় গাছের আকার ও আকৃতি প্রায় ব্রি ধান-২৯ এর মতো। এর চাল গুলো লম্বা, চিকন ও সাদা। প্রতি কেজি চালে জিংকের পরিমাণ রয়েছে ২৫.৫ মি. গ্রাম। এ বছর ৫০ জন কৃষক এই ধানের চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে অনেক কৃষক আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আগামীতে আরো বেশি জমিতে কৃষকরা এই ধান চাষ করবেন। এবার যে সকল কৃষকরা এই ধানের চাষ করেছেন তাদের বীজ, সার, কীটনাশক, বালাইনাশকসহ আর্থিকভাবেও সহযোগিতা করা হয়েছে। এছাড়াও নানা পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে এসব কৃষকদের। ধানের ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকরা এই ধানের বীজ অনেক মূল্যে বিক্রি করতে পারবেন।তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন জাতের ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এ বছর বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি প্রত্যাশা করছেন এ কর্মকর্তা।