• ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ রাত ০২:২৪:২৭ (22-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ রাত ০২:২৪:২৭ (22-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:

অদম্য এক জীবনযোদ্ধা নওগাঁর মাউথ পেইন্টার ইব্রাহিম

সাদ্দাম উদ্দিন আহমদ: দুর্ঘটনায় হারিয়েছেন দুই হাত, দুই পা-ও পুরোপুরি অবশ। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাকে দমাতে পারেনি । মুখ দিয়ে তুলি চেপে ধরে আঁকছেন একের পর এক ছবি।হুইল চেয়ারের সঙ্গে বিশেষ কায়দায় লাগানো আছে ক্যানভাস, তুলির আঁচড়ে স্পষ্ট হয়ে উঠছে একের পর এক ছবি। ইব্রাহিম মল্লিক এভাবেই নিজের প্রতিভাকে বিকশিত করেছেন। এরই মধ্যে মাউথ পেইন্টার হিসেবে খ্যাতিও পেয়েছেন তিনি।মাউথ পেইন্টার ইব্রাহিম মল্লিক নওগাঁর মান্দা উপজেলার চককেশব (বালুবাজার) গ্রামের মৃত নজর মল্লিকের ছেলে। বিধবা মা সুফিয়া বেগম, ভাই শহিদুল মল্লিক, ভাবি সুলতানা মল্লিককে নিয়ে তার সংসার।হুইল চেয়ারে বসে দিনের পর দিন ছবি আঁকতে গিয়ে ঘটছে বিপত্তি। শুয়ে থাকতে থাকতে পিঠের দুইধারে ফোসকা পড়ে ইনফেকশন হয়, ইনফেকশন হয় পায়েও । সেখান থেকে সৃষ্টি হয় দগদগে ঘা। এখন চিৎ হয়ে শুয়ে থাকতেও কষ্ট হয় তার। তারপরও দমে যাননি অদম্য জীবনযোদ্ধা ইব্রাহিম। বছরের পর বছর ধরে বিছানায় এক কাতে শুয়ে থেকেই ছবি আঁকেন, ছবি আঁকন চেয়ারে বসে বসেও।এইচএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করে বিদ্যুতের লাইনে কাজ করতেন । ২০০৫ সালের এক দুর্ঘটনা তার জীবনকে উলটপালট করে দেয়। দুর্ঘটনার পর দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে অবশেষে সাভারের সিআরপিতে চিকিৎসা নেন দীর্ঘ ৮ বছর।সিআরপিতে চিকিৎিসাধীন অবস্থায় তিনি জানতে পারেন, লাভলী নামে শরীরিক প্রতিবন্ধী এক নারী মুখ দিয়ে ছবি আঁকছেন। যদিও লাভলীর সঙ্গে তাঁর কখনো দেখা হয়নি। লাভলীর গল্প শুনে তিনি অনুপ্রাণিত হন। এরপর মুখ দিয়ে ছবি আঁকার দীক্ষা নেন । তার পর থেকে শুরু, এ পর্যন্ত কয়েক হাজার ছবি এঁকেছেন। প্রায় সব ছবিই বিক্রি হয়ে গেছে।ইব্রাহিম জানান, প্রথমদিকে ছবি আঁকতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তেন। মাথা ব্যাথা করতো, কখনো মাথা ঘুরতো; অনেক সময় বমি করতেন। এখন সেসব সমস্যা নেই। এখন তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা ছবি আঁকতে পারেন। প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি আঁকতে তার বেশি ভালো লাগে ।তিনি আরও জানান, সিআরপিতে থাকা অবস্থায় আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের মানুষের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। তাঁদের অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে এখনো। পরিচিত বিদেশিদের মাধ্যমেই একসময় আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে তার আঁকা ছবি বিক্রি হয়েছে।ইব্রাহিম মল্লিক আরও জানান, তিনি এখন মরা লাশ ছাড়া আর কিছুই নন। তার শরীরের খুব সামান্য একটা অংশ সচল। দৈনন্দিন কাজ ও ছবি আঁকাতে সহযোগিতা করেন অসুস্থ মা, বড়ভাই ও ভাবি। জন্মের আড়াই বছর বয়সে তার বাবা মারা গেছেন। মা আছেন বলেই পরিবারের অন্য সদস্যরা খুব একটা খারাপ ব্যবহার করেন না। গ্রামের মানুষরাও তাকে খুব ভালোবাসে। তবে মায়ের অবর্তমানে কী হবে এই চিন্তার কোনো কূলকিনারা খুঁজে পান না এই শিল্পী।প্রতিবন্ধী এই শিল্পীর সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, নওগাঁ জেলার পুলিশ সুপার প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান মিয়া ছবি আঁকার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন। দুধ খাওয়ার জন্য একটি গাভী-বাছুর দিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজির আহমেদ। দুর্যোগ সহনীয় একটি বাসগৃহ নির্মাণ করে দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। এজন্য প্রশাসনের সকল স্তরের কর্মকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি। মাউথ পেইন্টার ইব্রাহিম মল্লিক একজন গুণী শিল্পী। মুখ দিয়ে মুহূর্তেই যে কোনো ছবি আঁকতে পারেন। প্রতিবন্ধী হওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতা করা হয়।তবে করোনা পরিস্থিতির পর থকে অনেকটাই থমকে গেছে এই মাউথ পেইন্টারের জীবন। ছবির অর্ডার কম হওয়ায় এ পেশা থেকে আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পিঠের পেছনের ঘায়ের চিকিৎসা ও ড্রেসিং করাতে প্রতিমাসে অনেক টাকা ব্যয় হচ্ছে। মায়ের বিধবাভাতা ও তার প্রতিবন্ধীভাতার টাকায় কোনো রকমে চলছে সংসার।জীবনের অবশিষ্ট সময় ছবি এঁকেই কাটাতে চান এই মাউথ পেইন্টার। তবে একটু সচ্ছলভাবে বাঁচতে সরকার ও বিত্তবানদের সহায়তা কামনা করেন।