• ঢাকা
  • |
  • মঙ্গলবার ৭ই কার্তিক ১৪৩১ রাত ০৯:০৪:২৭ (22-Oct-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • মঙ্গলবার ৭ই কার্তিক ১৪৩১ রাত ০৯:০৪:২৭ (22-Oct-2024)
  • - ৩৩° সে:

মধুপুর গড়ে বৈচিত্র্যময় মান্দি নৃত্য স্থান পেয়েছে নিজস্ব স্বকীয়তায়

মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি: নারীরা দকশাড়ী দকমান্দা পড়তে পছন্দ করে মধুপুর আবিমা অঞ্চলের গারো মান্দি নারীরা। হাতে পায়ে তাদের নিজস্ব অলংকার। মাথায় চুংআ। অনেক সময় পিঠে সন্তান নিয়ে চলা যেন তাদের কৃষ্টি কালচারের মধ্যে অন্যতম। নারীরা পুরুষের সাথে সমান তালে মাঠ ঘাটে কাজ করে থাকে।সমাজে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও নেতৃত্ব দিয়ে থাকা এ জাতিগোষ্ঠীর রয়েছে নিজস্ব বৈচিত্র্যময় কৃষ্টি কালচার। তাদের নানা পূজা পার্বণে অনুষ্ঠানকে তাদের মান্দি নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে করে তোলে বৈচিত্র্যময়। শিশু থেকে শুরু করে যুবক যুবতী ও খেটে খাওয়া নারীরাও তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির নৃত্যে কম বেশি পারদর্শী।তাদের নানা বাদ্যযন্ত্রেরও রয়েছে বৈচিত্র্য। রাং, আদুরি, খোল, ঢোলসহ নানা বাদ্যযন্ত্র আর নিজের মান্দি গানের তালে তালে নিজস্ব পরিমণ্ডল থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত রয়েছে গারো কৃষ্টি কালচারের বিচরণ।মধুপুর গড় অঞ্চলে তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে চলে গ্রাম বিভিন্ন গান মান্দি পরিবেশনা। শিশুরা ছোট থেকেই শিখে থাকে তাদের নিজস্ব মান্দি গান নৃত্য। মাথায় পালকের মুকুট, পড়নে দকমান্দা, দকশাড়ী, পায়ে আলতাসহ নানা অলংকার পড়ে থাকে তাদের পরিবেশনায়। ছোট থেকেই শিশুরা তাদের মান্দি নৃত্য শিখে থাকে। কেউ দেখাদেখি কেউবা আবার তাদের গ্রামের পারদর্শী নৃত্য শিল্পীর কাছে। স্কুল কলেজে গিয়েও তাদের এ কৃষ্টি কালচার পরিবেশন করে খ্যাতি অর্জন করতে দেখা যায়।মধুপুরে বসবাসরত গারোদের সংগঠন জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক জানান, শিক্ষাদীক্ষা বিদ্যালয় মিশনারি বাড়ার ফলে মান্দি নৃত্যচর্চা আগের চেয়ে বেড়েছে। মান্দি নৃত্য বিয়ে সাদি সামাজিক সাংস্কৃতিক ধর্মীয় অনুষ্ঠান কিংবা অতিথি বরণেও পরিবেশন হয়ে থাকে। এটি তাদের আদি টেডিশন।তার মতে, নতুন কিছু করতে বা ধরে রাখতে আদিবাসী কালচারাল একাডেমি বা সরকারিভাবে চর্চা কেন্দ্র করা দরকার। সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরও ভালো হবে। তিনি জানান, এটি নিয়ে গবেষণা করা দরকার বলে তিনি মনে করেন।স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গারো সম্প্রদায় তিব্বত-বর্মী জাতিগোষ্ঠী যারা প্রধানত উত্তরপূর্ব ভারতীয় রাজ্য মেঘালয়, আসাম, ত্রিপুরা ও নাগাল্যান্ড এবং বাংলাদেশের কিছু প্রতিবেশী এলাকায় রয়েছে তাদের বসবাস । খাসিদের পরে তারা মেঘালয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম উপজাতি এবং বাংলাদেশের বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে এদের বসবাস বেশি।গারোরা ভাষা অনুযায়ী বোডো মঙ্গোলীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। জাতিগত পরিচয়ের ক্ষেত্রে অনেক গারোই নিজেদেরকে মান্দি বলে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে থাকে। গারোদের ভাষায় 'মান্দি' শব্দের অর্থ হল 'মানুষ'। তাদের সমাজে মাতৃতান্ত্রিক পরিবার প্রথা প্রচলিত।মমিনপুর, ধরাটি, কোনাবাড়ি, সাইনাবাড়ি, গায়ড়া, দোখলা, পীরগাছাসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে স্থানীয় গারো সম্প্রদায়ের লোকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের প্রধান ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবের নাম ওয়ানগালা। ওয়ানগালা উৎসবে তাদের দেবতা মিশি আর সালজং এর উদ্দেশ্যে উৎপাদিত ফসল উৎসর্গ করা করে থাকে।তাদের প্রথা অনুযায়ী ওয়ানগালা না হওয়া পর্যন্ত মন্দিরা নতুন উৎপাদিত ফসলাদি খেত না। একসময় এ উৎসবে একেক গ্রামের মানুষদের সামর্থ্যানুযায়ী সাতদিন কিংবা তিনদিন ধরে এ উৎসবটি চলতো।অতীতে গারোরা তাদের নিজস্ব সাংসারেক ধর্ম পালন করত। সাংসারেক তাদের আদি ধর্মের নাম ‌। খৃষ্টধর্ম গ্রহণের পর থেকে বর্তমানে বেশিরভাগ গারোরাই খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণের পর থেকে তাদের সামাজিক নিয়মকানুন, আচার-অনুষ্ঠানে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। তাদের সমাজে মাতা হলো পরিবারের প্রধান। গারোদের গোষ্ঠী বা চাচ্ছি মাহারি রয়েছে। সাংমা, মারাক, রিছিল, আরেং, নকরেক, চাম্বুগং, মাজি, ম্রং, মৃ, আতিওয়ারাসহ আরও কয়েক টাইটেল রয়েছে।মান্দি নৃত্য শিক্ষক রোজি ম্রং জানান, তারা স্থানীয় ভাবে শিশুদের নৃত্য শিখিয়ে থাকেন। বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আগে তারা দুই একটি চর্চা করে অংশ নিয়ে থাকে।মধুপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান যষ্ঠিনা নকরেক বলেন, তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মান্দি নৃত্য পরিবেশন করা হয়। তাদের গ্রামের কম্প্রেশনে রয়েছে নৃত্য দল। স্থানীয় ভাবে শিশুদের এ নৃত্য শিখানো হয়।