পরকীয়ার অভিযোগে ইসলামি ব্যাংক ম্যানেজারকে মারধর
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: ঋণ গ্রহীতা এক নারীর সাথে ইসলামি ব্যাংক লিমিটেডের ম্যানেজার মুহা. উমর ফারুককে পরকীয়া সম্পর্ক রাখার অভিযোগে আটকে রেখে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে ম্যানেজারকে তুলে নিয়ে গিয়ে তাকে আটকে রেখে মারধরের ঘটনাটি ঘটে।স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ব্যাংক ম্যানেজারের সাথে ঋণ গ্রহীতা হিসেবে সম্পর্ক গড়ে উঠে দিনাজপুর জেলার ব্যবসায়ী আল আমিনের স্ত্রীর সাথে। ব্যবসায়ী আল আমিনের অভিযোগ, গ্রাহকের সাথে যোগাযোগের নামে তার স্ত্রীর সাথে পরকীয়া সম্পর্ক তৈরি করেন ব্যাংক ম্যানেজার। এমনকি ঢাকায় তার বাসায় গিয়ে স্ত্রীর সাথে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেন ব্যাংক কর্মকর্তা উমর ফারুক।তবে ম্যানেজারের দাবি, পরকীয়া নয়, ব্যাংকিং কাজের অংশ হিসেবে ঋণ গ্রহীতা হওয়ায় তার যোগাযোগ ছিল ওই নারীর সাথে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শীর্ষ ব্যবসায়ী ও আদর্শ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদেকুল ইসলাম ওরফে সাদেকুল ভুসি অনৈতিক সুবিধা আদায় করতে না পেরে এমন মিথ্যা পরকীয়ায় নাটক সাজিয়ে তাকে হেনস্তা করেছে বলে পালটা অভিযোগ ওই ব্যাংক কর্মকর্তার।মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর কৌশলে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ব্যাংক কর্মকর্তা উমর ফারুককে তুলে নিয়ে গিয়ে রেহাইচর এলাকার জনমানবহীন স্থানে আটক করে একদল সন্ত্রাসী। পরে তাকে সেখানে বেধড়ক মারধর করা হয়। ছিনিয়ে নেয়া হয় মোবাইলফোন। পরে একটি প্রাইভেট কারে করে নিয়ে যাওয়া হয় জেলা শহরের মসজিদপাড়া এলাকার একটি বাড়ির কক্ষে। এসময় ঘরে আটকে রেখে মারধর করে দিনাজপুরের ব্যবসায়ী আল আমিনের স্ত্রীর সাথে পরকীয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হয়। এমনকি তাকে সামনে রেখে পরকীয়ার বিষয়ে জানানো হয় ব্যাংক কর্মকর্তা উমর ফারুকের স্ত্রীকেও। ঘরবন্দি রাখার কয়েক ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে সস্ত্রীক উপস্থিত হন অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী ও আদর্শ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদেকুল ইসলাম। এসময় ব্যবসায়ী আল আমিন ও ব্যাংক কর্মকর্তা উমর ফারুকসহ উপস্থিতিদের কথা শুনে উভয়পক্ষকে নিয়ে সমাধান করার কথা জানান তিনি৷ পরে ছেড়ে দেওয়া হয় ব্যাংক কর্মকর্তা উমর ফারুককে। রক্তাক্ত অবস্থায় রাতেই বাসায় ফেরত যান তিনি। এদিকে, ঘটনার পরদিনই মুহা. উমর ফারুককে বদলি করা হয়েছে খুলনা জোনাল অফিসে।ব্যবসায়ী আল আমিন বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের সুদের হার কম হওয়ায় আমার স্ত্রীর নামে একটি ঋণ করি ইসলামি ব্যাংকে। এরই সূত্রে দীর্ঘদিন ধরে আমার স্ত্রীর সাথে পরকীয়া সম্পর্কে ছিলেন ম্যানেজার উমর ফারুক। এমনকি একাধিকবার আমার ঢাকার বাসায় গিয়ে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। এই পরকীয়ার জেরে আমার সাথে স্ত্রীর মনোমালিন্য হয়ে যোগাযোগ বন্ধ হয়েছে। এমনকি আমাকেও বলেছে, আমার স্ত্রীর নাকি দায়িত্ব নিতে চাই। এমনকি ভিডিও কলে কথা বলার প্রমাণও পেয়েছে আমার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে।তিনি আরও বলেন, পরকীয়ার সকল তথ্য প্রমাণ থাকায় তাকে আটক করেছিলাম। পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে জানিয়েছিলাম। তবে এনিয়ে কোন লিখিত অভিযোগ করিনি। উমর ফারুক তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন এবং আমার স্ত্রীর সাথে আর কোন ধরনের যোগাযোগ না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। হাজী সাহেব (সাদেকুল ইসলাম) এসব ঘটনার সবকিছুই জানেন।পরকীয়ার সম্পর্ক অস্বীকার করে ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখার সদ্য বিদায়ী ম্যানেজার মুহা. উমর ফারুক বলেন, কয়েকমাস আগে ব্যবসায়ী সাদেকুল ইসলাম অনৈতিক ও নিয়মবহির্ভূত একটি এলসির বিপরীতে অনাপত্তিপত্র আবেদন করেন। তা প্রত্যাখান করলে আমাকে হাত-পা ভেঙ্গে দেয়ার হুমকি দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সাদেকুল ইসলামের ভাতিজা ও তার লোকজন তুলে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়৷ বর্তমানে আমি চিকিৎসা নিচ্ছি।এনিয়ে কথা বলতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জের শীর্ষ ব্যবসায়ী ও আদর্শ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদেকুল ইসলাম ওরফে সাদেকুল ভুসি ফোন রিসিভ করেননি। এবিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখার এক কর্মকর্তা জানান, ম্যানেজার স্যারকে আটকে রেখে মারধর ও গুরুতর অভিযোগ পাওয়ার পর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাকে তাৎক্ষণিক খুলনা জোনাল অফিসে বদলি করা হয়েছে।