• ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ রাত ১২:৫০:১৬ (22-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ রাত ১২:৫০:১৬ (22-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:

নওগাঁয় লাম্পি স্কিন রোগে মারা যাচ্ছে গরু

লোকমান আলী, নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁয় জেলাজুড়ে গরুর দেহে দেখা দিয়েছে লাম্পি স্কিন রোগ (এলএসডি)। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে অনেক গরু। চিকিৎসা করিয়েও কোনো প্রতিকার না পেয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক ও খামারিরা। তবে আতঙ্কিত না হয়ে খামারিদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, লাম্পি স্কিন রোগ আক্রান্ত হয়ে জেলার ১১টি উপজেলায় গত ১৫দিনে ১ হাজার ৩০০টি গরু চিকিৎসা নিয়েছে। এছাড়া টিকা প্রদান করা হয়েছে ৭ হাজার। খামারিদের সচেতন করতে ৬০টি সভা করা হয়েছে। এছাড়া পাঁচ হাজার লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। জেলায় প্রায় ২২ লাখ গবাদিপশু আছে।মহাদেবপুর উপজেলার চকরাজা গ্রামের জালাল উদ্দীন বলেন, আমার সাত মাস বয়সের দু’টি বাছুরে এই রোগ (লাম্পি স্কিন) দেখা দিলে পশু চিকিৎসের কাছে যাই। অনেক টাকা ব্যয় করে ২ সপ্তাহ চিকিৎসা করার পরে একটি মারা গেছে, অন্যটি এখনও অসুস্থ। প্রতিদিন ডাক্তার এসে চিকিৎসা দিচ্ছে। কিন্তু ওষুধে কোনো উন্নতি হচ্ছে না।জানা গেছে, লাম্পি স্কিন ভাইরাস জনিত রোগ। এ রোগে প্রথমে গরুর চামড়ার উপরি অংশে টিউমার জাতীয় উপসর্গ ও বসন্তের মতো গুটি গুটি উপসর্গ দেখা দেয়। এরপর দু-একদিনের মধ্যেই গরুর শরীরজুড়েই গুটি গুটি হয়ে ঘা-এ পরিণত হচ্ছে। এ সময় গরুর শরীরে ১০৪ থেকে ১০৬ ডিগ্রী তাপমাত্রার জ্বর দেখা দেয় এবং গরু খাওয়া ছেড়ে দেয়। অনেক সময় গরুর বুকের নিচে পানি জমে ক্ষত সৃষ্টি হয় এবং ক্ষতস্থানে পচন ধরে। এ রোগে আক্রান্ত হলে পশু দুর্বল হয়ে ওজন কমে যায়, দুধ উৎপাদন হ্রাস পায়। এখন পর্যন্ত এ রোগের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি।নাম প্রকাশে অনুচ্ছিক এলাকার কয়েকজন পশু চিকিৎসক বলেন, এই এলাকায় ২০-২৫ দিন পূর্বে এই রোগ দেখা দিয়েছে। এলাকার প্রায় প্রতিটি ঘরে এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। আশপাশের কয়েক গ্রাম মিলে অন্তত ২৫ থেকে ৩০টি গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এক থেকে ছয় মাস বয়েসি (বাছুর) গরুর এই রোগ বেশি হচ্ছে। এদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষদতা কম, তাই এরা সহজে আক্রান্ত হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে।সদর উপজেলার বর্ষাইল ইউনিয়নের ঝিকরা গ্রামের আব্দুল হান্নান সম্প্রতি তার চার মাস বয়সী লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত বাছুর নিয়ে উপজেলার সদরে ভেটেরিনারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন। আব্দুল হান্নান বলেন, হঠাৎ করেই এক সপ্তাহ আগে শরীরে কয়েকটি গুটি দেখা যায়। গ্রাম্য চিকিৎসকে দেখানোর পর কিছু ইনজেকশনসহ কিছু ঔষধ দেয়। কিন্তু কোনো কাজে আসেনি। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পশু হাসপাতালে নিয়ে আসি।সদরের তিলোকপুর ইউনিয়নের ইকড়তাড়া গ্রামের দিবস মজুমদার বলেন, বাড়িতে ছয়টি গরু। এরমধ্যে তিনমাস ও চার মাস বয়সের দুইটি বাছুর। বাছুর দুটি আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা দিলে একটা সুস্থ হয়ে গেছে। আরেকটি সুস্থ হওয়ার পথে।একই গ্রামের গৃহবধু আদরি বলেন, আশপাশের কয়েকটি গরুতে এসব অজানা রোগ হচ্ছে। অনেক কষ্ট পাচ্ছে গরুগুলো। অনেক টাকাও খরচ করে সুস্থ করছে। আমাদের গরুতেও যদি এ রোগ হয়, এ নিয়ে আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি।বদলগাছী উপজেলার কোলা ইউনিয়নের আদিত্যপুর গ্রামের বজলুর রশিদ বাবলু বলেন, আমার চারটি গরু। এরমধ্যে দেড়মাস বয়সের বাছুর আক্রান্ত হয়। সারা শরীর গুটি গুটি ছিল। কোন কিছু খেতে পারতো না। ১২ দিনের মতো অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ হয়নি। চারদিন আগে বাছুরটি মারা যায়। প্রায় ৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল। আরেকটি তিনমাসের বাছুর আক্রান্ত হয়েছে দুইদিন হলো। উপজেলা পশু হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা করে নিয়ে আসলাম। এখন আল্লাহ ভরসা।বদলগাছী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নাজমুল হক বলেন, বসন্তের (পক্স) একটি জাত ভাইরাসের মাধ্যমে এ রোগ ছড়াচ্ছে। এ রোগে আক্রান্ত হলে অনেকেই স্থানীয়ভাবে গরুর চিকিৎসা নিচ্ছে। তবে সুস্থ না হওয়ায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে নিয়ে আসছে। চিকিৎসা নিয়ে আক্রান্ত গরুগুলো সুস্থ হচ্ছে। যারা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিচ্ছে তাদের গরুই হয়তো মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটছে, যা আমাদের জানা নেই।নওগাঁ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মহির উদ্দিন বলেন, জেলায় ব্যাপকহারে লাম্পি স্কিন রোগ দেখা দিয়েছে। এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা পাওয়া গেছে ১ হাজার ৩০০টি। যেখানে টিকা প্রদান করা হয়েছে ৭ হাজার। খামারিদের সচেতন করতে ৫০টি সভা করা হয়েছে। এছাড়া পাঁচ হাজার লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। যে কেোন বয়সের গরুতে এ রোগ হতে পারে। এ রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। চিকিৎসা দিলে আক্রান্ত গরু সুস্থ হয়ে যায়। আক্রান্ত গরুকে টিকা প্রদান করা হচ্ছে।তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত গরু মারা যাওয়ার কোনো তথ্য নাই। বাছুর বেশি আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সব বয়সী গরুর এ রোগ হতে পারে। তবে বড় গরুর সহ্য ক্ষমতা বেশি থাকে।