স্বরূপকাঠিতে ১১৬ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্মাণ হয়নি শহীদ মিনার
পিরোজপুর প্রতিনিধি: সরকারি আদেশ অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৫২র’ ভাষা আন্দোলনের শহিদ মিনার স্থাপন বাধ্যতামূলক হলেও ৭৩ বছরের স্বরূপকাঠির (নেছারাবাদ) ২৬৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্য ১১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার। মাতৃভাষার সঠিক ইতিহাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।আওয়ামী লীগের শাসনামল ১৫ বছর স্বরূপকাঠিতে শেখ মুজিবুর রহমার ও শেখ হাসিনার শতাধিক স্তম্ব ও ভাস্কর্য স্থাপন করা হলেও, আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ ভাষা আন্দোলনের শহীদদের বীরত্বসূচক সম্মাননার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়নি। ভাষা আন্দোলনের ৭৩ বছর ও স্বাধীনতার ৫৪ বছর অতিক্রান্তের পরও স্বরুপকাঠী উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বায়ান্নর’র ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শহিদের স্মরণে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানানো শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়নি।নেছারাবাদ উপজেলা শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ‘উপজেলায় মোট ২৬৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্য প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৭০টি, মাধ্যমিক ৬৯টি, মাদ্রাসা ২১টি ও কলেজ রয়েছে ৭টি’। এর মধ্যে ১১৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। ২১ ফেরুয়ারি আন্তর্জাতিক ৫২র’ মাতৃভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।স্বরূপকাঠি কলেজিয়েট অ্যাকাডেমির ছাত্র নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, আমরা খুবই উদ্বিগ্ন জাতীয় দিবসগুলোতে আমাদের ফুল দিতে হয় সরকারি স্বরুপকাঠি কলেজে। স্কুলে একটা শহীদ মিনার থাকলে ভালো হয়।তৃতীয় শ্রেণি ছাত্র সিয়াম বলে, ২১ ফেব্রুয়ারি আবার কী? ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত স্বরুপকাঠী কলেজিয়েট একাডেমি, ৫০ বছরেও শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি।এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রাধান শিক্ষক মোরশেদুল হক বলেন, অর্থবিল আছে কিন্তু জায়গার অভাবে করা হয়নি। তবে অচিরেই শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে।বড়ইবাড়ি আসমত আলী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাধান শিক্ষক হুমায়ুন কবির বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তা পেলেই শহীদ মিনার করা হবে।উত্তর করফা হানিফিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপারেনটেন্টে বলেন, সরকারের কোনো নিদের্শনা নেই। নিদের্শনা এলেই করব।নেছারাবাদ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন খলিফা বলেন, বিষয়টি অবগত হলাম, তদন্ত করা হবে।উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গির হোসেন বলেন, সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে জানানো হয়েছে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অচিরেই শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে।নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) উপজেলা দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শহীদ মিনার না থাকাটা দুঃখজনক। শহিদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।সুশীল সমাজ বলছেন, বাঙালি চেতনা ও আমাদের জাতিসত্তার প্রথম উন্মেষ ঘটে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। ভাষা শহিদদের প্রতি যথার্থ মর্যাদা দিতে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা উচিত। বাঙালিদের স্বাধীনতার প্রথম জাতীয় সত্ত ভাষাশহিদদের স্মৃতিচিহ্ন শহীদ মিনার না থাকাটা অত্যন্ত দুঃখজনক।