শেষ দিনে জমে উঠেছে নাসিরনগরের ঐতিহ্যবাহী শুঁটকি মেলা!
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগরে চলছে ঐতিহ্যবাহী শুঁটকি মেলা। ১৬ এপ্রিল বুধবার শেষ হবে। প্রতি বছর পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে নাসিরনগর উপজেলার কুলিকুন্ডা গ্রামের উত্তর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে দুই দিনব্যাপী এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়।স্থানীয়দের ধারণা প্রায় ৩০০ বছর আগে প্রাচীনকালে যখন কাগজের মুদ্রা প্রচলন হয়নি ঠিক তখন থেকে কৃষকেরা তাদের সদ্য উৎপাদিত ফসলের বিনিময়ে কেনাবেচা করতেন। বিনিময় প্রথার দিয়ে শুরু হয়েছিল মেলা। ঐতিহ্য ধরে রাখতে কিছুক্ষণের জন্যে চলে বিনিময় প্রথা। আগের মতো বিনিময় প্রথা না থাকলেও দিন দিন মেলাটি উৎসব মুখর হয়ে উঠছে। এবার শুঁটকি ও ক্রেতার উপস্থিতি অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি।দুই দিনব্যাপী এই মেলায় স্থানীয়সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত ব্যবসায়ীরা শোল, বোয়াল, গজার, টেংরা নাইল্লা, কাইক্কা, বাইম, কাচঁকি এবং পুঁটিসহ বিভিন্ন ধরনের শুঁটকি নিয়ে বসেছেন দোকানিরা। পুরো মাঠ জুড়ে রয়েছে এমন দৃশ্য দেখে যে কোনো বাঙ্গালীর মন জুড়াবে।মেলায় প্রতি কেজি নাইল্লা মাছের শুঁটকি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা, বোয়াল ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা, কাইক্কা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাঁচকি শুঁটকি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, শোল ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা এবং বাইম মাছের শুঁটকি কেনা-বেচা হচ্ছে প্রকার ভেদে ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা। এছাড়া এ বছর সামুদ্রিক কিছু মাছের শুঁটকিও এনেছেন দোকানিরা।এদিকে শুঁটকি মেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের জমিতে বসেছে লৌকজ মেলা। গ্রামীণ-লোকজ নানা পণ্যের পসরাও সাজিয়েছেন দোকানিরা। শিশুদের জন্য রয়েছে মাটির তৈরি বিভিন্ন খেলনা সামগ্রী। রয়েছে হরেক স্বাদের বাহারী খাবারও। মেলায় সার্বিক কেনাবেচা ভালো হওয়ায় খুশি দোকানিরা।মেলায় শুঁটকি কিনতে আসা কয়েকজন জানান, মেলাটি প্রায় তিনশ বছর ধরে ঐতিহ্য বজায় রেখেছে। বাজারের শুঁটকিতে কেমিক্যাল থাকায় তেমন ভালো হয় না। শুঁটকি মেলায় হাওরাঞ্চলের দেশীয় নানা প্রজাতির মাছের শুঁটকি পাওয়া যাচ্ছে। যার গুণগত মানও ভালো।বিক্রেতা জানান, শুঁটকির মান ভালো হওয়ায় তাদের বিক্রির চাহিদাও অনেক বেশি। দুই দিনব্যাপী মেলার হাটে ইজারার জন্য কোনো টাকা দিতে হয় না। সবাই পসরা সাজিয়ে বিক্রি করছেন। যে কোন বছরের তুলনায় এবার শুঁটকি ও ক্রেতার সংখ্যা এবার বেশি।উল্লেখ্য, এবার মোট পাঁচ একর জমিতে বসা মেলায় শুঁটকির দোকান ছাড়াও অন্তত ৫ শতাধিক দোকান বসেছে। এবার মেলায় অন্তত তিন কোটি টাকার পণ্য কেনাবেচা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।