জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার কৃতিত্ব পুরস্কার পেল রংপুরের সারা বাংলা কৃষক সোসাইটি
রংপুর ব্যুরো: রংপুরের সারা বাংলা কৃষক সোসাইটি যৌথভাবে কেনিয়ার একটি কৃষক সংগঠনের সঙ্গে এ বছর (২০২৩) জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার কৃতিত্ব পুরস্কার লাভ করেছে। কৃষি ক্ষেত্রে অসামান্য কৃতিত্বের জন্য সংগঠন, ব্যক্তি বা এফএও-এর টিমকে প্রতি বছর এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। ১৬ অক্টোবর সোমবার ইতালির রোমে ওই পুরস্কারটি দেয়া হয়েছে।এফএওর কান্টি ডিরেক্টর ও সারা বাংলা কৃষক সোসাইটির সভাপতি ওবায়দুল হক বলেন, বিশ্বময় এফএও’র কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে যে সকল উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ড সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে বা মানুষের জীবন ও জীবিকায় উজ্জ্বল পরিবর্তন আনে, সেই কর্মসূচি বাস্তবায়নকারীকে এই পুরস্কার দেয়া হয়। সাধারণত এই কৃতিত্ব মৎস্য, বন, জলবায়ু, ভূমি ও পানি, উদ্ভিদ ও প্রাণির স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিষয়ের উপর দেয়া হয়। যে কৃতিত্বের জন্য এই পুরস্কারের মনোনয়ন (ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা দল), সেটি দ্বারা সমাজ বা দেশের অগ্রগতিতে যে ব্যতিক্রমী বা প্রবর্তনামূলক ভূমিকা রেখেছে তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ থাকতে হবে। সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে টেকসই কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে প্রশাসনিক, প্রাযুক্তিক ও সাংগঠনিক নব প্রবর্তনার জন্য এই পুরস্কারের মনোনয়ন বিবেচনায় নেয়া হয়। সাথে সাথে এই বিবেচানাও করা হয় যে উক্ত প্রবর্তনা টেকসই হবে কি না? এর প্রসার ঘটানো যাবে কি না? এফএও’র এই মনোনয়ন ও চূড়ান্ত ঘোষণা একটি জটিল প্রক্রিয়া। সারা বিশ্বের এফএও অফিস থেকে মনোনয়ন চাওয়া হয়। তারপর স্থানীয়, আঞ্চলিক ও সদর দপ্তরের বিভিন্ন কমিটি ও বিশেষজ্ঞ প্যানেল কর্তৃক যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত প্রার্থী নির্বাচন করা হয়। স্বচ্ছ ও পক্ষপাতহীন এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমরা এই সম্মানজনক পুরস্কারটা পেয়েছি।তিনি বলেন, সারাবাংলা কৃষক সোসাইটি বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের শীর্ষ সংগঠন। খরাপ্রবণ উত্তর বঙ্গ ও লবণাক্ততা প্রবণ দক্ষিণ বঙ্গের ষোলটি জেলার ৫৫টি কৃষক সংগঠন নিয়ে এটি গঠিত। মোট সদস্য সংখ্যা দশ হাজারের অধিক। এই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের সংগঠিত করে তাদের বহুমাত্রিক সমস্যা সমাধানে সারা বাংলা নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। সংগঠন শক্তিশালীকরণ, আর্থিক ব্যবস্থাপনা, নেতৃত্ব বিষয়ক প্রশিক্ষণসহ তহবিল ব্যবস্থাপনায় সারা বাংলা যে প্রবর্তনামূলক স্বচ্ছতা নিয়ে এসেছে তার ফলে এত দিনকার সমবায়ের তহবিল ব্যবস্থাপনায় যে জটিলতা ছিল তা সমাধান করা গেছে। তহবিল ব্যবস্থাপনা ও তদারকিতে ডিজিটাল প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যা কোনো বিশেষজ্ঞ ছাড়াই কৃষকরা নিজেরা নিজেরা শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় আত্মনির্ভরতার সাথে পরিচালনা করতে সক্ষম।সভাপতি বলেন, সারা বাংলা স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানেও মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ঘূর্ণায়মান ঋণ ব্যবস্থাপনায় শতভাগ ঋণ ফেরৎ পাওয়া নিশ্চিত করেছে। ঋণ প্রদান করা হয় মূল্য সংযোজন ধারাভিত্তিক ব্যবসা পরিকল্পনার ওপর। ব্যবসা পরিকল্পনাটি আবার প্রস্তুত করা হয় এফএও’র ডিজিটাল প্রযুক্তি রুরাল ইনভেস্ট টুল ব্যবহার করে। ফলে ব্যবসায়ের ঝুঁকি অনেক কমে গেছে। একই সাথে পরিবীক্ষণের কাজ চালু থাকাতে ব্যবসায় ব্যর্থতার হার কমে গেছে। এমএমআই মডেল হিসেবে বিবেচিত এই মডেলটি বাংলাদেশ সরকারের তিন তিনটি প্রকল্প পরিচালনা কমিটি (পিএসসি) কর্তৃক সারাদেশে ছড়িয়ে দেবার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো (সরকারি-বেসরকারি) সারা বাংলার সদস্য সংগঠনগুলোকে জামানত ধরে কৃষকদের ঋণ প্রদান করছে। সেখানেও ঋণ পরিশোধের হার শতভাগ।সারা বাংলা কৃষক সোসাইটির সভাপতি বলেন, নেতৃত্বের ক্ষেত্রে নারী নেতৃত্ব সারা বাংলার একটি সৌন্দর্যের দিক। শতকরা ৬৫ ভাগ নারী সদস্য নিয়ে গঠিত সংগঠনগুলোতে নারীদের ক্ষমতায়নকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা হয়। তারই প্রতিফলন দেখা যায় সারা বাংলার কেন্দ্রীয় কমিটিতে, যা একটি নির্বাচিত কমিটি এবং এর সভাপতি, কোষাধ্যক্ষসহ বেশিরভাগ সদস্য নারী। কোভিড-১৯ অতিমারি মোকাবিলায় সারা বাংলা কৃষক সোসাইটি ৫৫ টি সদস্য সংগঠনে ভার্চুয়াল কল সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের উপকরণ ক্রয় ও উৎপাদিত পণ্য বিক্রয়ে সহায়তা করে তাদের জীবন জীবিকা বহমান রেখেছে। উল্লেখিত পটভূমিতে, বিশ্বময় প্রতিযোগিতা করে আমরা যৌথভাবে এবারের বিশ্ব খাদ্য দিবসে এই কৃতিত্ব পুরস্কার অর্জন করছি। সভাপতি আরও বলেন, এই অর্জন সারা বাংলার সকল সংগঠিত ও অসংগঠিত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের, আমাদের সকলের। এই অর্জন আমাদের দেশ ও দশের জন্য আরও নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করার অনুপ্রেরণা দেবে। আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা কৃষি মন্ত্রণালয়, ডিএই, ডিওএফ, ডিএলএস, বিএডিসির কর্মকর্তাবৃন্দের প্রতি, যারা আমাদের চলার পথে নিরলস সহায়তা দিয়েছেন। আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশ এএফও এবং আমাদের দাতা সংস্থা গ্লোবাল এগ্রিকালচার এন্ড ফুড সিকিউরিটি প্রোগ্রাম (জিএএফএসপি), যাদের অবিরাম সহায়তা ছাড়া আমরা এতদূর আসতে পারতাম না।