• ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ রাত ০১:০৬:০৬ (22-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ রাত ০১:০৬:০৬ (22-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:

১৭ বছরেও মোছেনি সিডরের দাগ, এখনো দুঃস্বপ্ন দেখেন উপকূলবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর। সেদিন বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হানে ভয়ানক ঘূর্ণিঝড় সিডর। আঘাতের সময় সিডরের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার। তবে এ সময় দমকা হাওয়ার বেগ উঠেছিল ঘণ্টায় ৩০৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। সিডরের প্রভাবে উপকূলে ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। তীব্র ঝড়ের সঙ্গে জলোচ্ছ্বাস পুরো উপকূল বিশেষ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল উপকূলের জেলাগুলো লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে যায়। ভেসে যায় ঘরবাড়ি, পশুপাখি আর অসংখ্য মানুষ। আজ সেই ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের ১৭ বছর পূর্তি। আজও সেই দুঃসহ দিনের কথা মনে করে আঁতকে ওঠেন উপকূলবাসী। এখনো তাদের তাড়িয়ে বেড়ায় সেই ভয়াল সিডরের ভয়। যাদের সিডর প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতা আছে তাদের অনেকেই সাগরে লঘুচাপ হলেই ভীত হয়ে ওঠেন।তৎকালীন বরগুনার ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির উপ পরিচালক (বর্তমানে পটুয়াখালী জেলায় কর্মরত) আসাদুজ্জামান খান জানান, সেদিন রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে কোনো কিছু বোঝার আগেই হঠাৎ করে শুরু হয়ে গেল ঘূর্ণিঝড়। এর আগে কয়েকদিন ধরেই বিক্ষুব্ধ ছিল প্রকৃতি। গভীর সমুদ্রে নিম্নচাপের খবর দিচ্ছিল আবহাওয়া বিভাগ। আগেরদিন বিকেলে দেয়া হয় ১০ নাম্বার মহাবিপদ সংকেত। প্রশাসনের উদ্যোগে আর প্রচারণায় সাইক্লোন শেল্টারসহ বিভিন্ন নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয় উপকূলের মানুষ। মোটামুটি ভালোভাবেই কাটে আগের রাতটি। ঝড় হয়নি দেখে পরদিন সকালে ঘরে ফেরে সবাই। তখনো বহাল ছিল সর্বোচ্চ বিপৎসংকেত। বিকেল থেকে বাড়তে শুরু করে ঝড়ো হাওয়া আর বৃষ্টি। বিকেল ৫টা নাগাদ হিরণ পয়েন্টে থাকা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির ওয়্যারলেসের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় যোগাযোগ। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সমুদ্র থেকে উপকূলে উঠতে শুরু করে সিডর। সঙ্গে করে নিয়ে আসে ১২-১৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস।পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বরিশাল অঞ্চলের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দেশের উপকূল সুরক্ষায় ১২৩টি পোল্ডারের অধীনে পাউবোর পাঁচ হাজার ১০৭ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৯৫৭ কিলোমিটার হচ্ছে সমুদ্র-তীরবর্তী বাঁধ। সমুদ্রের তীরবর্তী এ বাঁধের সিংহভাগই বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলার আওতায়।২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বরের সিডরে উপকূলীয় অঞ্চলের দুই হাজার ৩৪১ কিলোমিটার বাঁধ আংশিক ও সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে ছয় জেলার প্রায় ১৮০ কিলোমিটার সম্পূর্ণ এবং এক হাজার ৪০০ কিলোমিটার বাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, সিডরে বেড়িবাঁধ ভেঙে নোনা পানি ঢোকায় তাৎক্ষণিকভাবে চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়া জমির পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৭৮৭ হেক্টর।মৃত্যু ঘটে ১৭ লাখ ৭৮ হাজার ৫৬০টি হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুর। জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে ভেসে যাওয়া এবং বিধ্বস্ত হওয়া সড়কের দৈর্ঘ্য ছিল ৮ হাজার ৭৫ কিলোমিটার। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১ হাজার ৬৮৭টি ব্রিজ-কালভার্ট। তাৎক্ষণিকভাবে ৪ হাজার কোটি টাকার ফসলহানির হিসেব দেয় কৃষি বিভাগ।অন্যান্য ঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো এবারো হতাহত আর নিখোঁজের সংখ্যা নিয়ে বৈপরীত্য দেখা দেয় সরকারি-বেসরকারি হিসেবে। সরকারিভাবে মৃতের সংখ্যা বলা হয় ৩৩৬৩। অপরদিকে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার বলে জানায় রেড ক্রিসেন্ট।স্থানীয় সাংবাদিক অ্যাড. সঞ্জিব দাস স্মৃতিচারণ করে জানান, বরগুনা সদরে ক্ষতিগ্রস্ত একটি এলাকার নাম নলটোনা গ্রাম। ঘূর্ণিঝড়ের পরের দিনই সেখানে অর্ধ শতাধিক মানুষের লাশ পাওয়া যায়। গ্রামটি পানির নিচে থাকায় লাশ দাফনের জন্যও কোন স্থান খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। বরগুনা-নিশানবাড়িয়া সড়কের পাশে পশ্চিম গর্জনবুনিয়া গ্রামে দাফনের কাপড় ছাড়াই ওই গ্রামের ৩৩ জনকে ১৯টি কবরে দাফন করা হয়। জায়গার অভাবে ৫টি কবরে ৩ জন করে ১৫ জন, ৪টি কবরে ২ জন করে ৮ জন ও ১০টি কবরে ১ জন করে ১০ জনের লাশ দাফন করা হয়।সিডর চলে গেলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল প্রায় দেড় মাস। বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল একমাস। দেশি-বিদেশি দাতা সংস্থারাও যোগাযোগ না থাকার কারণে সঠিক সময় ত্রাণসহ সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে পারেনি।বরগুনার মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা অনেকেই ফিরে আসতে পারেনি। অনেকে চলে গেছে সাগরের অথৈ তলদেশে, ভাসতে ভাসতে পার্শ্ববর্তী মিয়ানমার কিংবা ভারতে। সিডরের সময়ে সাগরে ৩৭৫টি ফিশিং ট্রলার নিখোঁজ হয় এবং ২৮০টি ট্রলার বেড়িবাঁধের বিভিন্ন জায়গায় আছড়ে পড়ে। নিখোঁজ হওয়া পাথরঘাটার শতাধিক জেলে ভারতের উড়িষ্যা কারাগারে আটক হয়।১৫ নভেম্বরে স্বজন হারা উপকূলের মানুষেরা মিলাদ মাহফিল, দোয়া মোনাজাত, কোরআনখানি ও নানাবিধ পারিবারিক আয়োজনে দিনটিকে স্মরণ করেন।