• ঢাকা
  • |
  • শনিবার ২৯শে চৈত্র ১৪৩১ বিকাল ০৪:৩৩:০৬ (12-Apr-2025)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • শনিবার ২৯শে চৈত্র ১৪৩১ বিকাল ০৪:৩৩:০৬ (12-Apr-2025)
  • - ৩৩° সে:

দুই কারণে কমছে সূর্যমুখী ফুলের চাষ

নওগাঁ প্রতিনিধি: সূর্যমুখী ফুলের হাসিতে ফুটে উঠেছে নওগাঁর মাঠগুলো। বর্তমানে সূর্যমুখীর অধিকাংশ গাছেই ফুল ফুটেছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রদান করা প্রণোদনার মাধ্যমে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হচ্ছে এ জেলায়। আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকূলে থাকায় কৃষকরা সূর্যমুখী ফুলের বাম্পার ফলনের আশা করলেও দুটি কারণে নওগাঁয় প্রতিবছরই কমছে অত্যন্ত লাভজনক এই ফসলের চাষ। এই সমস্যাগুলোর কারণে ব্যক্তি পর্যায়ে আশঙ্কাজনক হারে কমেছে সূর্যমুখি ফুলের চাষ। তবু বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় এই ফসল চাষে আগ্রহী জেলার কৃষকরা।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার ১১টি উপজেলায় গত বছর ৬৫হেক্টর জমিতে এই ফসলের চাষ হয়েছিলো। চলতি বছর মাত্র ৩০ হেক্টর জমিতে এই ফসল চাষ হয়েছে। এর মধ্যে রাণীনগর উপজেলায় কৃষি প্রণোদনার মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে।সহজেই সরিষার তেল উৎপাদনের মতো সূর্যমুখি বীজ থেকে তেল উৎপাদনের সহজলভ্য প্রসেসিং পদ্ধতি না থাকার অভাবকে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে দেখছে কৃষি বিভাগ। এছাড়া সরিষা চাষের পর ধান চাষের সুযোগ থাকলেও সূর্যমুখী দীর্ঘ সময়ের ফসল হওয়ায় সূর্যমুখী চাষ করে ধান চাষে যাওয়া যায় না। মূলত এই সমস্যাগুলোর কারণেই প্রতিবছরই জেলাতে এই লাভজনক ফসলের চাষ কমছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।রাণীনগর উপজেলার মধ্যরাজাপুর গ্রামের সূর্যমুখী ফুলচাষী নুরুল ইসলাম নয়ন বলেন, অন্যান্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখী চাষে অনেক লাভ। সূর্যমুখী ফুলের চাষ করলে ফুল থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি বীজ থেকে কমপক্ষে আধা লিটার তৈল উৎপাদন সম্ভব আর প্রতি বিঘা জমিতে ৭ মণ থেকে ১০মণ বীজ উৎপাদন হয়। তেল উৎপাদন হবে প্রতি বিঘায় ১৪০লিটার থেকে ২০০লিটার পর্যন্ত। বর্তমানে প্রতি লিটার তেলের বাজার সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ৪২০ টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয় সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ হাজার টাকা। আর প্রতিবিঘা থেকে উৎপাদিত সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে আয় করা সম্ভব ২৫-৩০ হাজার টাকা। বর্তমানে বাজারে সূর্যমুখী বীজের তেলের অনেক চাহিদা রয়েছে। এছাড়া সূর্যমুখী ফুলের তেল অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। তাই ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের জন্য এই তেল অন্যান্য তেলের চেয়ে অনেক উপকারী ও স্বাস্থ্য সম্মত। সরিষার তেলে অনেকের সমস্যা হয়। কিন্তু সূর্যমুখীর তেলে কোন সমস্যা হয় না। তাই সরিষার তেলের মতো বাজারে সূর্যমুখী তেলের সরবরাহ পর্যাপ্ত হলে দাম কমার পাশাপাশি ভোক্তারাও সয়াবিন তেল বাদ দিয়ে এই তেলই ব্যবহার করবেন বলে তিনি আশাবাদী। এতে করে দেশজুড়ে সূর্যমুখীর চাষও বৃদ্ধি পাবে কয়েকগুণ।  রাণীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. মোস্তাকিমা খাতুন বলেন সুর্যমুখী চাষে সার ও কীটনাশকের ব্যবহার নেই বললেই চলে। এছাড়া সেচ দিতে হয় খুবই কম। যার কারণে অল্প খরচে অধিক লাভ করা সম্ভব। এছাড়া এই ফসলে পোকা ও মাকড়ের আক্রমণ নেই বললেই চলে। এককথায় কম খরচে, কম সময়ে ও কম পরিশ্রমে অধিক লাভবান হতে হলে সূর্যমুখী ফুল চাষের কোন বিকল্প নেই। তবে সরিষার মতো সূর্যমুখীর বীজ থেকে তেল বের করার পদ্ধতি সহজলভ্য না হওয়ার কারণে কৃষকরা দিন দিন সূর্যমুখী ফুল চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।জেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, সূর্যমুখীর বীজ থেকে যে তেল হয় তা অন্যান্য ভোজ্য তেলের চেয়ে অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত। অলিভ ওয়েলের পরেই সূর্যমুখী তেলের অবস্থান। সরিষার তেলে অনেকের সমস্যা হয়। তাই সয়াবিনের তেলের উপর চাপ কমাতে সূর্যমুখী তেলের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু কিছু সমস্যার কারণে জেলাতে প্রতিবছরই সূর্যমুখী ফুলের চাষ কমছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা সরকারের ঊর্ধ্বতন বিভাগকে সূর্যমুখী ফুলে চাষে প্রতিবন্ধকতার বিষয়গুলো লিখিতভাবে জানিয়ে আসছি। এছাড়া আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রণোদনার মাধ্যমে আগ্রহী কৃষকদের এই লাভজনক ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করে আসছি। দ্রুতই সমস্যাগুলো কাটিয়ে দেশে আবার সূর্যমুখী ফুল চাষে এক নীরব বিপ্লব ঘটবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।