• ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ রাত ০১:৪৪:৪৭ (22-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ রাত ০১:৪৪:৪৭ (22-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:

সৈয়দপুরে দৃষ্টিনন্দন চিনি মসজিদ প্রাচীন স্থাপত্যকলার নিদর্শন

ওবায়দুল ইসলাম, সৈয়দপুর: ভারত বর্ষে অসংখ্য মসজিদ রয়েছে। যা মহান আল্লাহ তায়ালার ঘর বা ইসলাম অনুসারিদের উপাসনালয় হিসেবে পরিচিত। মুসলমান শাসকদের আমল থেকে মসজিদ তৈরি হয়ে আসছে। মোঘল সাম্রাজ্য কালে বিভিন্ন মসজিদ স্থাপন করে গেছে।ভারতবর্ষ পীর আউলিয়ার দেশ হিসাবে খ্যাত। ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে ভারত বর্ষের মাটিতে বিভিন্ন সময় পীর বুজুর্গদের আবির্ভাব ঘটেছে । ইসলামের মহিমায় প্রচার বৃদ্ধি যেমন ঘটেছে, তেমনি বেড়েছে অনুসারি । বেড়েছে মসজিদের সংখ্যা । দেশ ভাগের পরও বিভিন্ন স্থানে মসজিদ স্থাপন চলেছে । শহর, বন্দর, গ্রাম, গঞ্জের আনাচে-কানাচে হাজার হাজার মসজিদ গড়ে উঠেছে।তেমনি সৈয়দপুর শহরেও রয়েছে বহু মসজিদ । তার মধ্যে কালের সাক্ষী হয়ে আছে সৈয়দপুরের চিনি মসজিদ । এখানকার চিনি মসজিদটি স্থাপন করা হয় ১৮৬৮ সালে । এটি তখনও পাকাকরণ হয়নি । দোচালা টিনের ছোট একটি ঘর ছিল আগে। পরবর্তীতে ইমাম হাজী হাফিজ আব্দুল করিমের উদ্দ্যোগে ১৯২০ সালে ৩৯.৪০ ফুট  আয়তনে মসজিদটির প্রথম অংশ পাকাকরণ করা হয় । এ পাকা অংশটির নকশা করেছিলেন হাজী করিম  নিজেই ।১৯৬৫ সালে মসজিদটির দ্বিতীয় অংশ তৈরি করা হয় । মসজিদের দক্ষিণ দিকে ২৫  ৪০ ফুট আয়তনে গড়ে তোলা হয়। মসজিদের সারা অবয়ব রঙ্গিন উজ্জ্বল পাথরে আবৃত।কলকাতা থেকে সেই সময় ২৪৩ খানা শংকর মর্মর পাথর এনে লাগানো হয় । এছাড়া চিনা মাটির টুকরা দিয়ে আবৃত চিনি মসজিদের সারা কাঠামো। ১৯৬৫ সালে বগুড়া তাজমা গ্লাস ফ্যাক্টরি প্রায় ২৫ টনের মত চিনা মাটির পাথর দান করেন । এভাবে মসজিদের সমস্ত অবয়বে খচিত রয়েছে চিনা মাটির টুকরা দিয়ে মনোরম নকশা।এছাড়া মসজিদে প্রবেশের জন্য উত্তর ও দক্ষিণে একটি করে মোট ২টি প্রধান দরজা রয়েছে। দোতলায় রয়েছে একটি কক্ষ । কক্ষটিতে পর্যটকদের রাত্রি যাপনের ব্যবস্থাও রয়েছে। মসজিদের নিজস্ব সম্পত্তি বলতে রয়েছে গা ঘেঁষা দোকানঘর । এ দোকান ঘরগুলোর ভাড়া ও কিছু চাঁদা মসজিদের বর্তমান আয়। যার ওপর নির্ভর করে মসজিদের সমস্যা সমাধান, ব্যয় ও উন্নয়ন মূলক কর্মকাণ্ড।মসজিদটির কিছু সদস্য রয়েছে । লোক সংখ্যার পাশাপাশি মসজিদে নামাজিদের সংখ্যাও বেড়েছে । সেই অনুপাতে মসজিদটির স্থান বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। মসজিদের ডান দিকে রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বামে রয়েছে একটি ইমাম বাড়ি। পশ্চিমে রয়েছে একটি খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীর কবরস্থান। এসব বিভিন্ন কারণে মসজিদের স্থান সংকুলানের অভাব মিটছে না। সমস্যার মধ্যে রয়েছে মসজিদে নামাজিদের ওযুর জায়গা । স্থাপত্যের নিদর্শন সৈয়দপুরের এই মসজিদটিকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশী বিদেশী পর্যটক দর্শন করে গেছেন ।এছাড়া দেশের কজন রাষ্ট্র প্রধানও এ মসজিদটি পরিদর্শন করে গেছেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকেও অনেকে আসেন এ মসজিদটি এক নজর দেখতে। এর মধ্যে ইংল্যান্ড, ইরান, আমেরিকা, পশ্চিম জার্মানি, সৌদি আরব, জাপান, ভারত ও পাকিস্তানের পর্যটকগণ বিভিন্ন সময়ে সৈয়দপুরে ঐতিহ্যবাহী এ চিনি মসজিদ দর্শন করে গেছেন।পর্যায়ক্রমে মসজিদটির ইমামতি অনেকেই করে গেছেন। তবে প্রথম পেশ ইমাম ছিলেন মাওলানা আব্দুল্লাহ। চিনি মসজিদ আমাদের অতীত ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রতীক । যুগ যুগ ধরে ধর্মীয় দিক্ষা দিয়ে চলেছে । এর শ্রীবৃদ্ধির জন্য আরও আমাদের সচেতন হওয়া দরকার। একে আরও বড় পরিসরে গড়ে তুলতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন । এর সংস্কার ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সরকারি সহায়ক একান্ত দরকার ।চিনা বা চিনি মসজিদ এটি শুধু উপাসনালয় নয়, এটি অত্যন্ত নয়নাভিরামও বটে । যা দেখে ধর্মানুরাগিদের দেহ মন এক আধ্যাত্বিক অনুভূতিতে জুড়িয়ে যায় । মনের বিশাল প্রান্তে এনে দেয় অনাবিল প্রশান্তি। যার সমস্ত কিছু মানুষকে নিষ্পাপ ও সুন্দর করে তোলে। এই নিদর্শন যুগ যুগান্তর ধরে ধর্মানুরাগিদের মাঝে কালের কোলে প্রজ্বলিত হয়ে থাকবে । শোনা যাবে সকাল দুপুর বিকেল সন্ধ্যা রাত্রিতে আজানের সুমধুর সুর। যা বাতাসের মধ্যে ইথারের মত ছড়িয়ে যাবে দূর-বহুদূর যুগ যুগ ধরে।