রংপুরে জামিন পেয়েই আদালতে স্লোগান আওয়ামী নেতাকর্মীদের, বিব্রত বিচারক
রংপুর ব্যুরো: চলতি বছরের ৪ ও ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনরত ছাত্র জনতার উপর হামলা শিক্ষার্থীদের শ্লীলতাহানি, মারপিট, নাশকতা, ভাঙচুর লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা নিয়ে করা মামলায় জামিন এই আদালতে হট্টগোল ও স্লোগান দিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এই ঘটনা আদালতের বিচারক বিব্রত বোধ করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে ৩০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুরে রংপুরের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বদরগঞ্জ আমলি আদালতের বিচারক হাসিনুর রহমান মিলনের সামনে।এ বিষয়ে ৩ নভেম্বর রোববার বিকেলে সিনিয়র অ্যাডভোকেট বায়েজিদ ওসমানী জানান, সারাদেশে নাশকতা মামলায় এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা উপর হামলাকারী নির্যাতনকারী কোনো মামলায় বিচারকরা জামিন দিচ্ছেন না শুধু ব্যতিক্রম রংপুরের বদরগঞ্জ আমলি আদালতে। এই আদালতের বিচারক অদৃশ্য ইশারায় ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারী নাশকতার লুটপাট ও সরকারি স্থাপনা হামলার ঘটনায় জামিন অযোগ্য ধারার সন্নিবেশিত থাকার পরেও তিনি পদধারী আওয়ামী লীগ নেতাদের জামিন দিচ্ছেন।গত ৩০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বদরগঞ্জের একটি মামলায় একসাথে ১০ জন আওয়ামি নেতাকর্মীদের জামিন দিলে আসামিদের লোকজন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এ দোসররা প্রকাশ্যে কোর্টের রুমের ভিতরেই বিচারকের সামনেই হৈ হুল্লুল সৃষ্টি করে বিচারককে অপমানিত করেছেন। পরে তারা বাহিরে এসে আওয়ামী লীগের হয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া শুরু করেন।তিনি আরো বলেন, আদালতের উচিত ছিল তাৎক্ষণিক আসামিদের জামিন বাতিল করা। কিন্তু তিনি তা না করার কারণে আওয়ামী লীগের দোসরা ছাত্র জনতার উপর হামলাকারীরা নির্দ্বিধায় নির্ভয়ে প্রকাশ্যে অন্যান্য মামলার বাদীসহ বিএনপি জামায়াতের লোকজনের উপর ভয় ভীতি ও হামলা এবং মিথ্যা মামলা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। তিনি দাবি করে বলেন, সামনের তারিখে অবশ্য অবশ্যই বিষয়টি খতিয়ে দেখে আওয়ামী দোসরদের জামিন বাতিল করে পুনরায় জেল হাজতে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে তারা আবারও আদালত প্রাঙ্গণে এমনকি বিচারকের সামনে প্রকাশ্যে স্লোগানসহ নানান ধরনের দেশবিরোধীতায় লিপ্ত হবেন।এ বিষয়ে পাবলিক প্রসিকিউটর ও আইনজীবী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পিপি সিনিয়র অ্যাডভোকেট আফতাব উদ্দিন জানান, গত ৪ ও ৫ আগস্ট বদরগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তার দোসরদের তাণ্ডব লুটপাট অগ্নিসংযোগ ভাঙচুর এবং ছাত্র জনতার উপর হামলার ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং এশিয়ান টেলিভিশনের রংপুর বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান ও দৈনিক ইনকিলাব বদরগঞ্জ প্রতিনিধি বাদশাহ ওসমানী দেশের জন্য বাদী হয়ে যে মামলাটি করেছেন। সেই মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাদী মামলা করে যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন সেটি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের মাইল ফলকের অংশীদার।তিনি জানান, আদালতগুলোতে এখনো আওয়ামী সরকারের অনেক দোসররা বসে আছেন। বিচারাঙ্গনে সঠিকভাবে কাজ না করার কারণে গুরুত্বপূর্ণ অনেক মামলায় আওয়ামী লীগের পদধারী নেতাকর্মীরা জামিনে পার পেয়ে যাচ্ছেন। এ ধরনের নাশকতা ভাঙচুর লুটপাট ও ছাত্র-জনতা এবং স্কুল-কলেজ ছাত্রছাত্রীদের উপর হামলা ও শ্রীলতা হানির ঘটনায় মামলায় জামিন দেয়ায় আদালতের বিচারকদের প্রতি সাধারণ মানুষ আস্থা কমে যাচ্ছে।তিনি আরও বলেন, ইতোপূর্বে আওয়ামী সরকারের সময় বিএনপি জামায়াত তথা তাদের কোন সমর্থকের নামে মামলা হলে জামিন দেওয়া তো দূরের কথা জামিনের আবেদনও গ্রহণ করত না আদালত। শত শত মিথ্যা মামলায় এখনো বিএনপি জামায়াতের লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী আদালতের বারান্দায় ঘুরছেন এবং জেল হাজতে রয়েছেন।এই মামলাগুলোতে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা যারা জামিন পেয়েছেন তারা আবারও সুসংগঠিত হয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তথা দেশের ক্ষতি করার জন্য সব সময় পাঁয়তারা করছেন। তাই এ ধরনের মামলাগুলোর আসামিদের জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে বিচারকদের আরো সতর্ক হওয়া উচিত বলে তিনি জানান।এ বিষয়ে মামলার বাদী বৈষম্যবিরোধী কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এশিয়ান টেলিভিশনের ব্যুরো প্রধান ও দৈনিক ইনকিলাবের বদরগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি বাদশাহ ওসমানী জানান, ৪ ও ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ কর্তৃক ভাঙচুর ছাত্র-জনতার উপর হামলা ছাত্রীদের শ্রীলতা হানি নাশকতা ও লুটতরাজের বিরুদ্ধে বদরগঞ্জ তারাগঞ্জ আসনের সাবেক এমপি ডিউক চৌধুরী সাবেক মন্ত্রীর ছেলে পৌর মেয়র টুটুল চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগের ১৬৩ জন নেতাকর্মীর নামে বিজ্ঞ আদালতে মামলা করা হয়। মামলাটি আমল নিয়ে তাৎক্ষণিক বদরগঞ্জ থানাকে এজাহার হিসেবে গণ্য করতে বলেন আদালত। বদরগঞ্জ থানা মামলা নম্বর ১৬ ও জিআর মামলা নং ১৯২/২৪।বাদী আরো জানান, গত ৩০ অক্টোবর বদরগঞ্জ আমুলি আদালতে জামিন পেয়ে আসামীরা কোটের ভেতরেই হট্টগোল করে নানান ধরনের স্লোগান দেন এবং বাহিরে এসে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দিয়ে বাদীকে এবং বাদীর পরিবারকে নানান ধরনের ভয় ভীতি হুমকি প্রদান করেন। এছাড়াও ১ নভেম্বর শুক্রবার ও ২ নভেম্বর শনিবার বিকেলে জামিনপ্রাপ্ত আসামি ও আসামির লোকজন প্রকাশ্যে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বাদীকে ভয় ভীতি দেখান এবং বাদীর নামে নানান ধরনের মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠানোর হুমকি প্রদান করেন। এ ঘটনায় মামলার বাদী নিরাপত্তা চেয়ে বদরগঞ্জ থানায় ২ নভেম্বর শনিবার রাতে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। সাধারণ ডায়েরি নং৮২/ তারিখ ২ নভেম্বর ২০২৪ ইং।এ বিষয়ে বদরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) নুরুল আমিন জানান, জিডির কপিগুলো আমরা হাতে পেয়েছি। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।আদালতের ভিতরে আসামিপক্ষের লোকজনের হট্টগোল ও স্লোগানের বিষয়ে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রধান বিচারক সুরুজ সরকারের সাথে কথা হলে তিনি জানান, বিচারকরা স্বাধীন এখানে কেউ কারো উপর হস্তক্ষেপ করেন না। সবাই স্বাধীনভাবে কাজ করেন। তবে সবাইকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত বলে তিনি জানান। জামিন পেয়ে কেউ হই হুল্লুল করবে এটি কারো কাম্য নয়।