ফিলিপাইন জাতের আখ চাষে কৃষক ফারুকের বাজিমাত
ক্ষেতলাল (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: দেখতে কালো, খয়েরি। লম্বায় সাধারণত ১২-১৬ ফুট। দেশীয় আখের মতো হলেও রয়েছে বেশকিছু ভিন্নতা। এ আখের কাণ্ড নরম, রস বেশি, মিষ্টিও বেশি। তাই স্বাদে ভরপুর, রসে টইটম্বুর, আঙুল দ্বারা যে আখের খোসা ছড়ানো যায়, সেই ফিলিপাইনের ব্ল্যাক জাতের আখের বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে বাজিমাত করেছেন জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার কৃষক ফারুক হোসেন (৩৫)। পার্শ্ববর্তী কালাই উপজেলা থেকে বীজ সংগ্রহ করে সেখান থেকে আবার নতুন করে চারা তৈরির পর সেগুলো রোপণ করে এখন লাভের স্বপ্ন দেখছেন তিনি।আখ চাষি কৃষক ফারুক হোসেন, ক্ষেতলাল পৌর মহল্লার রামপুরা চৌধুরী পাড়া গ্রামের সাজ্জাদ হোসেনের ছেলে। ইউটিউব দেখে ফিলিপাইন জাতের এই কালো আখ চাষে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। গত ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে তার ৪৫ শতাংশ জমিতে আবাদ করেছেন ফিলিপাইন জাতের এ কালো আখ।জানা গেছে, দেশের সর্ববৃহৎ চিনিকল জয়পুরহাট সুগার মিলস লিমিটেড এ জেলায় অবস্থিত। তবে আখের অভাবে এই চিনিকল কয়েক দিন চালুর পরে আবার বন্ধ রাখতে হয়। একারণে বছরের পর বছর কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয় চিনিকলটিকে।কৃষিনির্ভর এ জেলার প্রধান ফসল ধান ও আলু। তবে জয়পুরহাটে সুগার মিলকে সচল রাখতে একসময় এ জেলায় অর্থকরী ফসল হিসেবে আখের প্রচুর চাষ হতো। কিন্তু বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা, যথাযথ সহায়তার অভাব ও দীর্ঘমেয়াদি ফসল হওয়ায় এই অঞ্চলের কৃষকরা আখ চাষ হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।কিন্তু বর্তমানে নতুন জাতের ফিলিপাইন ব্ল্যাক আখ চাষ লাভজনক হওয়ায় এ অঞ্চলের অনেকেই নতুন করে আগ্রহী হচ্ছেন। তারই ধারাবাহিকতায় সেই ফিলিপাইন ব্ল্যাক জাতের আখ চাষ করে বাজিমাত করেছেন জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার রামপুরা গ্রামের কৃষক ফারুক হোসেন।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক ফারুকের জমিতে সারি সারি আখ। তিনি তার জমিতে আখের পরিচর্যা করছেন। আখগুলো লম্বায় বড় হওয়ায় যেন সহজেই ভেঙে না যায় সেজন্য বাঁশ ও রশি দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। আখগুলো সাধারণভাবে দেখতে দেশীয় আখের মতো হলেও কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। গোড়া থেকে পুরো কাণ্ডই মোটা ও নরম। আঙুলে একটু চাপ দিলে রস পাওয়া যায়। রস যেমন রয়েছে, তেমনি মিষ্টিও বেশি। আখের গায়ের রঙ কালো হলেও ভেতরটা সাদা।কৃষক ফারুক হোসেন বলেন, আমি একজন ব্যবসায়ী। ইউটিউবের মাধ্যমে ফিলিপাইন জাতের আখ ব্ল্যাক সুগার কেইন সম্পর্কে জানতে পারি। শখের বসে প্রথমে ফিলিপাইন জাতের আখ চাষ করতে আগ্রহী হই। গত বছর পার্শ্ববর্তী উপজেলা কালাইয়ের পাঁচগ্রাম থেকে বীজ সংগ্রহ করি। তারপর সেগুলো চারাতে রূপান্তর করে ৪৫ শতাংশ জমিতে রোপণ করেছি। এই ৯ মাসে একটি চারা থেকে ৫-৬টি করে চারা বের হয়েছে। এ আখ চাষে কীটনাশকসহ অন্যান্য খরচ নেই বললেই চলে। চারা ক্রয় ও রোপণ করতে আমার খরচ হয় প্রায় দুই লাখ টাকা। আশা করছি, বর্তমানে জমির আখ ৬-৭ লাখ টাকা বিক্রি করা সম্ভব হবে।তিনি বলেন, ফিলিপাইন জাতের ব্ল্যাক সুগার কেইন অল্প সময়েই পরিণত হয়ে যায়। ১০-১১ মাস বয়সে প্রায় ১৬-১৮ ফুট লম্বা ও যথেষ্ট মোটা হয়। রস সাধারণ আখের চেয়ে দ্বিগুণ ও যথেষ্ট মিষ্টি হয়ে থাকে। অন্য কিছুর সঙ্গে বেঁধে রাখতে হয়। যেকোনো জমিতে ব্ল্যাক সুগার কেইন আবাদ করা যায়। এ ছাড়া একবার এ চারা রোপণ করলে পরবর্তী ৩ বছর আর নতুন করে রোপণের প্রয়োজন হয় না। কেটে ফেলা আখের গোড়া থেকেই নতুন করে চারা গজিয়ে ওঠে এবং তার থেকে পরবর্তী বছরে আবারও ফলন পাওয়া যায়।ক্ষেতলাল উপজেলা কৃষি অফিসার জাহিদুর রহমান বলেন, এ উপজেলায় ফিলিপাইন জাতের আখ আবাদ শুরু হয়েছে। ফারুক হোসেন নামের এক কৃষক এই আখ আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন। উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।তিনি আরও বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলায় বেশ কয়েকজন কৃষক এই আখ চাষ করেছেন। তাদের দেখে উদ্ধুদ্ধ হয়ে অনেক কৃষক এই আখ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। এই আখের জাতকে ভালোই মনে হচ্ছে। আশা করছি, এই আখ চাষে অন্য কৃষকরাও লাভবান হবেন।